সরাইলে আহত ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও দোকানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ

প্রতিপক্ষর ভাঙচুরের শিকার একটি বসতঘর। বুধবার বিকেলে সরাইল উপজেলার তেরকান্দা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই দিনের সংঘর্ষের পর আহত এক ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়ি ও দোকানপাটে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বিকেলে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশাররফ হোসাইনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, তেরকান্দা গ্রামের আমীর আলীর বংশ এবং চান্দের বংশের লোকজনের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে চান্দের বংশের এক তরুণের সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা চুরি হয়। এ জন্য তাঁরা আমীর আলী বংশের লোকজনকে দায়ী করেন। এর জের ধরে গত সোমবার সন্ধ্যার পর এবং মঙ্গলবার ভোরে উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে ইউএনও, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নারী-পুরিুষ আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ দুই পক্ষের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সোম ও মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলাকালে চান্দের বংশের অন্তত ১০টি বসতবাড়ি এবং ২টি দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। আজ বেলা দুইটার দিকে মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়, সংঘর্ষে আহত চান্দের বংশের জসিম উদ্দিনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এ জন্য মাইকে গ্রামবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়। বেলা তিনটার দিকে গ্রামে গুজব ছড়ানো হয়, জসিম উদ্দিন মারা গেছেন।

এমন খবরে আমীর আলীর বংশের লোকজন গ্রাম ছাড়তে থাকেন। কিছুক্ষণ পর চান্দের বংশের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের বসতবাড়ি ও দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর–লুটপাট করতে থাকেন। অগ্নিসংযোগ করা হয় অন্তত আটটি খড়ের স্তূপে। আমীর আলীর বংশের জামাল মিয়ার মুদিদোকানে ভাঙচুর করে সব লুটে নেওয়া হয়। এ সময় জামাল মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৩০) দোকান রক্ষায় এগিয়ে এলে তাঁকে মারধর করা হয়।

খবর পেয়ে বিকেল চারটার দিকে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশাররফ হোসাইনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।  ইউএনও মোশাররফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আহত এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর প্রচার করে এমনটি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা ঘটনাস্থলেই আছি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা সবাইকে শান্ত থাকার আহবান করছি।’

সরাইল থানার ওসি মো. রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চান্দের বংশের লোকজন অনেকটা কোণঠাসা অবস্থার মধ্যে ছিলেন। তাঁদের পক্ষের আহত একজন ঢাকায় মারা গেছেন, এমন খবর প্রচার হলে আজকের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ওই লোক আদৌ মারা গেছেন কি না, আমরা জানি না। দায়িত্বশীল কোনো সূত্র থেকে আমরা এমন কোনো খবর পাইনি। এটি গুজব বলেই মনে হচ্ছে।’