জোর করে মাদ্রাসায় দিয়ে এসেছিলেন বাবা, পরে শৌচাগারে পাওয়া গেল ছাত্রীর লাশ

মরদেহ উদ্ধার
প্রতীকী ছবি

নরসিংদী সদর উপজেলার শেখেরচরের একটি মহিলা মাদ্রাসায় পাঠদান চলাকালে শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে ওই ছাত্রীর লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসা নামের পাঁচতলা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারতলার শৌচাগার থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ওই ছাত্রীর নাম আফরিন আক্তার (১৬)। সে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার দড়িগাজীরগাঁও এলাকার ডালিম মিয়ার মেয়ে এবং ওই মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের (উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষার্থী ছিল।

এ বিষয়ে মাদ্রাসাটির দারোয়ান ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, সকাল আটটার আগে আফরিন আক্তারকে মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন তার বাবা ডালিম মিয়া। ওই সময় আফরিন মাদ্রাসার ফটক দিয়ে ঢুকতে চাচ্ছিল না। তাকে জোর করে মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে যান ডালিম মিয়া। তখন আফরিন বলছিল, ‘আমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করব না, বেশি জোর করলে ফাঁস লাগিয়ে মারা যাব।’ এর জবাবে ডালিম মিয়া তাঁর মেয়েকে বলেন, ‘মরলে এখানেই মর, আমি এসে লাশ নিয়ে যাব।’ এর আগেও অনেকবার জোর করে মেয়েকে মাদ্রাসায় দিয়ে গেছেন তিনি।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে কথা হয় ডালিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ওই মাদ্রাসায় পড়তে চাচ্ছিল না। আজ সকালে সে বলছিল, মাদ্রাসায় পাঠালে কিছু খাবে না। আমি বলেছিলাম, “না খেলে না খাবি, মাদ্রাসায় যেতেই হবে।” পরে আমি একপ্রকার জোর করে মাদ্রাসায় দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এই সামান্য কারণে মেয়ে আমার আত্মহত্যা করে বসবে, ভাবতে পারিনি। পরে দুপুরে শিক্ষকদের কাছে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে তার লাশ দেখতে পেয়েছি।’  
‘মরলে মাদ্রাসায়ই মর, আমি এসে লাশ নিয়ে যাব’, এই বক্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ডালিম মিয়া বলেন, মেয়েকে এ ধরনের কোনো কথা বলেননি তিনি।

মাদ্রাসাটির একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্রেণিশিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শৌচাগারে যায় আফরিন। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও সে ক্লাসে না ফেরায় বেলা একটার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই শৌচাগারে তাকে খুঁজতে যায়।

একপর্যায়ে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে আফরিনকে ঝুলতে দেখে তারা। তাদের চিৎকারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সেখানে ছুটে যায়। এরপর আফরিনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাদ্রাসাটির শিক্ষক আহসানুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছাত্রী পারিবারিক কারণে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গেটসংলগ্ন সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে, মেয়েকে জোর করে মাদ্রাসায় দিয়ে গিয়েছিলেন বাবা। কী কারণে ওই ছাত্রী মাদ্রাসায় আসতে চাইছিল না, তা খতিয়ে দেখলেই আত্মহত্যার কারণ জানা যাবে।’

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোজী সরকার বলেন, আফরিন নামের ওই ছাত্রীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার গলায় ফাঁস নেওয়ার মতো চিহ্ন ছিল।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে শুনেছি। ওই ছাত্রীর বাবা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদি প্রয়োজন মনে হয়, তবে অবশ্যই লাশের ময়নাতদন্ত হবে।’

সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট থানা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সুপারিশে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম ইবনুল হাসান। তিনি বলেন, আত্মহত্যার মতো বিষয়গুলোতে এমন (ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর) অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। অনেক বিষয়ই এর মধ্যে থাকতে পারে, তাই তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্ত হওয়া দরকার।