হাচন ভানুর মৃত্যু কাঁদাল কাউন্সিলর হুমায়ুন কবিরের পরিবারকে

বৃদ্ধা হাচন ভানুকে ছয় মাস ধরে সেবাযত্ন করেছেন কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অসুস্থ বৃদ্ধা হাচন ভানুকে (৭০) ঝালকাঠির লঞ্চঘাটে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির ওরফে সাগর। এরপর ছয় মাস ধরে তাঁর সেবাযত্ন করে হুমায়ুন কবিরের পরিবার। এ ক্ষেত্রে হুমায়ুন কবিরকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করেন তাঁর স্ত্রী সুখী আক্তার ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।

সেই হাচন ভানু আজ সোমবার সকালে মারা গেছেন। এ মৃত্যু ব্যথিত ও বিষণ্ন করে তুলেছে হুমায়ুন কবিরের পরিবারকে।

হুমায়ুন কবির ঝালকাঠি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আজ সকালে শহরের লঞ্চঘাটসংলগ্ন বেঁড়িবাধ এলাকার তাঁর বাসায় বৃদ্ধা হাচন ভানুর মৃত্যু হয়। এরপর হুমায়ুন কবির বিভিন্নভাবে হাচন ভানুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর শেষবিদায়েও স্বজনেরা তাঁকে দেখতে আসেননি।

ছয় মাস সেবাযত্ন করে হাচন ভানুর প্রতি মায়া জন্মে গিয়েছে বলে জানান হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী সুখী আক্তার। তিনি বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে মনে হয়েছে, একজন আপন মানুষ হারালাম। তাই চোখের পানি রাখতে পারিনি। বুকটা খালি খালি লাগছে।’

আজ বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদের সামনে জানাজা হয় হাচন ভানুর। সেখানে স্থানীয় সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে তাঁর লাশ দ্বিতীয় পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, গত মে মাসে বৃদ্ধা হাচন ভানুকে শহরের লঞ্চঘাটে অসুস্থ অবস্থায় পান তিনি। মাথায় বড় একটি টিউমার থাকায় ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। সেখান থেকে হাচন ভানুকে নিয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপতালে ভর্তি করান তিনি। এক মাস চিকিৎসা শেষে তাঁকে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন। এরপর তিনি বৃদ্ধার স্বজনদের খোঁজ শুরু করেন।

পরে জানা যায়, হাচন ভানুর স্বামীর বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়ায়। তাঁর স্বামী বেঁচে নেই। স্বামীর ‍গ্রামের বাড়িতে কেউ থাকেন না। দুই মেয়ে বিয়ের পর থেকে স্বামীদের সঙ্গে খুলনায় থাকেন।

হাচন ভানুর অনেক নিকটাত্মীয় ঝালকাঠি শহরে থাকেন জানিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, তাঁরাও কেউ হাচন ভানুর দায়িত্ব নিতে চাননি। তবে হাচন ভানুর দুই মেয়ে ও স্বজনদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।

সমাজে বৃদ্ধদের প্রতি পরিবারের অবহেলা দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, হাচন ভানুর স্বজনেরা তাঁর দায়িত্ব নিতে চাননি। তাই তাঁকে লঞ্চঘাটে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন।