‘মা ছাড়া মেয়ে দুটোকে বড় করা কঠিন’

মা মারা যাওয়ার পর থেকে হুমাইরা ইয়াসমিন ওহি (১১) এবং রাফিয়া ইয়াসমিন রাহি (৭) বড় হচ্ছে বগুড়ায় নানা বাড়িতে
ছবি: মাসুদ রানা, ধুনট

ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন (৩১)। পথে পেছন থেকে ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে মা-মেয়েরা রাস্তায় ছিটকে পড়েন। এতে দুই সন্তান বেঁচে গেলেও মারা যান সাবিনা। গত বছরের ২৯ মার্চ রাজধানীর ভাষানটেক থানার নেভি মার্কেটের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

মা নেই, তাই হুমাইরা ইয়াসমিন (১১) ও রাফিয়া ইয়াসমিনের (৭) ঠিকানা হয়েছে বগুড়ার নানাবাড়িতে। ধুনট পৌরসভার পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামে বড় হচ্ছে মাহারা দুই শিশু। একজন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে, অন্যজন নার্সারিতে।

গতকাল রোববার বিকেলে হুমাইরা–রাফিয়ার নানাবাড়িতে গেলে রাফিয়া কোনো কথা বলেনি। হুমাইরা চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখেছে। তাই মায়ের প্রসঙ্গ এলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। কেঁদে কেঁদে বলে, ‘আগে মায়ের কাছে বায়না করতাম। এখন মা তো আর নেই। বায়না করব কার কাছে?’

হুমাইরা-রাফিয়ার নানি পারভিন আকতার বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ের সন্তান ওরা। আমরা যে কয়দিন বাঁচি, আমাদের কাছে ওদের আদরের কোনো কমতি থাকবে না। তবে ওদের মায়ের অভাব তো আর দূর করতে পারব না। যতটুকু পারি, মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি।’

সাবিনার স্বামী রফিকুল ইসলাম নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য। বর্তমানে সিরাজগঞ্জে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। দুর্ঘটনার আগে রাজধানীর বিআরবি কলোনিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। রফিকুল এক-দুই মাস পরপর মেয়েদের দেখতে যান, খরচ দেন।

গতকাল মুঠোফোনে রফিকুল বলেন, ‘মা ছাড়া মেয়ে দুটোকে বড় করা অনেক কঠিন। আমার যে ক্ষতি হইছে, তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব না। তখন বুঝি নাই, তাই মামলা করি নাই। পরে ট্রাস্ট পরিবহনের গাড়িগুলো দেখে বুঝলাম, গাড়িগুলোর দোষ ছিল, ফিটনেস ছিল না।’

রফিকুলের অভিযোগ, স্থানীয় মার্স হাসপাতালে তাঁর স্ত্রী চিকিৎসা পাননি। পথচারীরা তাঁকে ওই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। আক্ষেপ করে রফিকুল বলেন, ‘গাড়িতে যদি ব্রেক থাকত, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটলেও সাবিনা হয়তো কম আঘাত পেতেন। এভাবে তো মেয়েদের সামনে মরতে হতো না।’

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মাসুদ রানা, ধুনট, বগুড়া]