বান্দরবানে পর্যটনকেন্দ্রে বন্য প্রাণী বন্দী করে রাখার অভিযোগ

বান্দরবানে মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে খাঁচায় রাখা গন্ধগোকুল। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

বান্দরবান জেলা শহরের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে ভালুক, মায়াহরিণসহ পাঁচ ধরনের বন্য প্রাণী বন্দী করে রাখার অভিযোগ তুলেছে বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। আজ রোববার ইউনিটের পরিচালক ছানাউল্যা পাটোয়ারী জানিয়েছেন, পর্যটনকেন্দ্রে বন্দী বন্য প্রাণীগুলো বন বিভাগে হস্তান্তরের জন্য জেলা প্রশাসনকে এক বছর আগে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী এখনো প্রাণীগুলো হস্তান্তর করা হয়নি।

বন অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যটনকেন্দ্রে বন্দী করে রাখা প্রাণীগুলো হস্তান্তরের জন্য গত বছরের ২০ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এক বছরেও চিঠির কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এটি খুবই হতাশাজনক।

বন অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে, মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে বিপন্ন প্রজাতির কয়েকটি বন্য প্রাণী বন্দী অবস্থায় আছে। এর মধ্যে দুটি ভালুক, সাতটি মায়াহরিণ, একটি বাগডাশ, একটি বানর ও একটি অজগর রয়েছে। প্রাণীগুলোর মধ্যে ভালুক ও অজগর বৈশ্বিকভাবে বিপন্ন প্রজাতির।

চিঠি থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী দেশীয় যেকোনো বন্য প্রাণী ক্রয়-বিক্রয়, আটক, প্রদর্শন ও দখলে রাখা আইনত অপরাধ। এ ছাড়া বন্য প্রাণী করোনাভাইরাসসহ নানা ধরনের ভাইরাস বা জীবাণু বহন করতে পারে। পর্যটনকেন্দে আটক রাখা প্রাণীগুলোও জীবাণুবাহক হলে পর্যটকদের জন্য সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য প্রাণীগুলো স্থানীয় বন বিভাগে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বান্দরবানে মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রের খাঁচায় রাখা মায়া হরিণ। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

অজগর ছাড়া চিঠিতে উল্লেখ করা বাকি বন্য প্রাণীগুলো ওই পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে। প্রাণীগুলো খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক ছানাউল্যা পাটোয়ারী জানান, দেশীয় কোনো বন্য প্রাণী ধরে এনে খাঁচায় বন্দী করে সংরক্ষণ করার কোনো বিধান নেই। চিড়িয়াখানায় যে প্রাণী যে পরিবেশে থাকে, সেই পরিবেশে রাখা আর খাঁচায় বন্দী করে রাখা এক বিষয় নয়। এ জন্য মেঘলা পর্যটনের বন্দী বন্য প্রাণীগুলো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবিলম্বে বন বিভাগে হস্তান্তর করা উচিত।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চিঠির বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেছেন, তাঁরা বন অধিদপ্তরের কোনো চিঠি পাননি। বন বিভাগ থেকেও জানানো হয়নি। মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে কোনো অজগর সাপ নেই। বিলুপ্তপ্রায় যেসব প্রাণী পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিলুপ্তি থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত অনুকূল পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বন্য প্রাণীগুলো উন্মুক্ত করে দিলে শিকারিদের হাতে মারা যাবে।