এক আসনেই ‘মনোনয়ন যুদ্ধে’ তিন ভাইবোন

নাজনীন সরওয়ার, সাইমুম সরওয়ার, সোহেল সরওয়ার
ফাইল ছবি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর গতকাল সোমবার জমা দিয়েছেন তিন ভাইবোন। তাঁরা হলেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, তাঁর বড় ভাই ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং তাঁদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। এই তিনজন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য ওসমান সরওয়ার আলমের সন্তান।

এক পরিবারের হলেও কক্সবাজারের রাজনীতিতে তাঁরা একে অপরের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনজনই দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে তৎপরতা চালাচ্ছেন।  

তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সোহেল সরওয়ার সম্প্রতি রামু উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে ফেলেছেন। এমপি বলয় তৈরি করে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আওয়ামী লীগ বাঁচাতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। মাঠও গোছানো আছে।

ছোট বোন নাজনীন সরওয়ার প্রসঙ্গে সোহেল সরওয়ার বলেন, মনোনয়ন চাইলে তো হবে না, নির্বাচন করতে হলে কর্মী বাহিনী দরকার, ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দরকার। তাঁর (নাজনীন) তো সেটা নেই।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সোহেল সরওয়ার। ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ ৫ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪ মাস আগে অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন।

নাজনীন সরওয়ার কক্সবাজার-৩ আসন ছাড়া কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকেও মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তবে তিনি কক্সবাজার-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। নাজনীন সরোয়ার বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে তিনি ভাইদের জন্য ছাড় দিয়েছেন। এবার আর ছাড় দেবেন না। তিনিও সাইমুম সরওয়ারের সমালোচনা করেন। নাজনীন সরওয়ার বলেন, তিনি দুর্বৃত্ত শ্রেণির লোকজনকে রাজনীতিতে ব্যবহার ও পুনর্বাসন, ভূমিদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়েছেন। যে কারণে তিনি জনগণের আস্থা হারিয়েছেন।

দুই ভাইবোন প্রসঙ্গে সাইমুম সরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার আছে। ভাইবোনদেরও আছে। তবে গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু আছে, সেটা দেখার বিষয়। মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে। এখানেও তাই হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে ধ্বংস এবং বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে সাইমুম সরওয়ার বলেন, নৌকার ভোট ব্যাংক বাড়াতে কত হিসাব-নিকাশ করতে হয়। জনগণের ওপর তাঁর আস্থা যথেষ্ট। গত ১০ বছরে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আর কে মনোনয়ন পাবেন, সে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।

এদিকে তিন ভাইবোন ছাড়াও কক্সবাজার-৩ আসনে এ পর্যন্ত দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আরও আটজন নেতা। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, বর্তমান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ, কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি রণজিত দাশ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিজান সাঈদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী।  

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন পেতে এবার শক্তিশালী কয়েকজন নেতার তৎপরতা ভোটারদের নজর কাড়ছে। নতুন মুখও আছে বেশ কয়েকজন। শেষ পর্যন্ত এ আসনে নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন, তা দেখতে হলে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।