রওশন না থাকায় ময়মনসিংহ-৪ আসনে এবার জমজমাট নির্বাচনের আভাস
বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। ওই দুটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রওশন এরশাদের পক্ষে কাজ করেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রওশন এরশাদ অংশ নিচ্ছেন না। এবার দলীয় প্রার্থী পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা খুশি। কেবল তা–ই নয়, আওয়ামী লীগের একজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীও হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির একজন সাবেক সংসদ সদস্যও এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। রয়েছেন জাপার মনোনীত প্রার্থীও। ফলে এবারের নির্বাচন বেশ জমজমাট হবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ভোটাররা।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোহিত উর রহমান ওরফে শান্ত। তিনি ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের ছেলে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আমিনুল হক ওরফে শামীম। তিনি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি। তাঁর ছোট ভাই মো. ইকরামুল হক ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র। জাপার মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু মুসা সরকার। আরেক স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান। তিনি বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত থাকায় দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। এই চার প্রার্থীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠেছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহিত উর রহমান দলের মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বসিত। তবে তাঁদের মধ্যে অবশ্য শঙ্কা ছিল রওশন এরশাদ শেষ মুহূর্তে প্রার্থী হবেন কি না। রওশন এরশাদ নির্বাচনে না আসায় অনেকটা নির্ভার হন মোহিতের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। তবে অনেকটা ‘গোপনে’ প্রার্থী হন ব্যবসায়ী নেতা ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক। ৬ ডিসেম্বর তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তিনি সদর আসনে নির্বাচন করবেন। আমিনুল হক ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এখন সদর আসনেই নির্বাচন করবেন বলে জানাচ্ছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মোহিত উর রহমান ও আমিনুল হক নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন বিভিন্ন আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা, ধর্মীয় সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।
গত রোববার রাতে সদর উপজেলার চর হরিপুর এলাকায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমিনুল হক। সেখানে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পেছনে দলীয় সমর্থন আছে। যে কারণে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে আছেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মো. আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ সদর দুটি আসনেই প্রার্থী হয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত একটি আসনে নির্বাচনে করব। সদরে নির্বাচন করার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ।’
মোহিত উর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর দলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমি বেশির ভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বর্ধিত সভা করেছি। নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত।’
জাপার প্রার্থী আবু মুসা সরকারও বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় তিনি সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া এলাকায় জনসংযোগ করেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালো সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি।’
স্বতন্ত্র আরেক প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন খান ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে এক-এগারোর সংস্কারপন্থী হিসেবে তিনি দল থেকে ছিটকে পড়লে রাজনীতি থেকেও দূরে সরে যান। গত ১৫ বছর তিনি বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। দেলোয়ার হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর দল থেকে দূরে আছি। তবে জনগণ আমাকে ভালোবাসেন বলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’
এ ছাড়া এ আসনে আরও আটজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন জাসদের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ওরফে চুন্নু, জাকের পার্টির প্রার্থী কামালউদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক চন্দ্র গুপ্ত, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী পরেশ মোদক, তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী হামিদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান ও সেলিম খান।
১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেউ চাইলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে।