বাঁধ সংস্কার না করায় দুর্ভোগ

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলবাড়ী বাঁধ। সম্প্রতি তোলা ছবিছবি: প্রথম আলো

২০১৫ সালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী বাঁধ বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার আট বছরেও এটি সংস্কার করা হয়নি। এতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে ফুলবাড়ী ও পূর্ব মিরাপুরের কয়েক শ পরিবার ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বাঁধটি দ্রুত মেরামত না করলে বর্ষকালে এসব মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধটি কবে কারা নির্মাণ করেছে, সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে কোনো তথ্য নেই। বাঁধটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্মাণ করেছে বলে দাবি করে পাউবো। তবে শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) পাউবোর দাবি নাকচ করে দিয়েছে। পাউবো ও ইউপি কার্যালয়ের কেউই দায়িত্ব না নেওয়ায় দীর্ঘ আট বছরেও বাঁধটি সংস্কারের কাজ শুরুই করা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতে ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী আত্রাইয়ের ফুলবাড়ী বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়কের মির্জাপুর এলাকার কিছু অংশ ধসে পড়ে। এতে ওই সময় আশপাশের ৮–১০টি গ্রামের কয়েক শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এতে আত্রাই-রানীনগর উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও বাঁধটি মেরামত করা হয়নি।

বাঁধের এই অংশ ভেঙে থাকায় বর্ষাকালে রাইপুর, ডাঙ্গাপাড়া, ফুলবাড়ী, পূর্ব মিরাপুর, উদনপৈয়, মিরাপুরসহ ৮–১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ওই মৌসুমে এসব এলাকার লোকজনকে নৌকায় চলাচল করতে হয়। এ ছাড়া বাঁধ ভাঙা থাকায় স্থানীয় লোকজনকে শুষ্ক মৌসুমেও সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার ভবানীপুর-মির্জাপুর হাটে যাতায়াত করতে সমস্যা পোহাতে হয়। বাঁধটি সংস্কার না করায় স্থানীয় কৃষকদের কৃষিপণ্য স্থানীয় হাটবাজারে নিতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে উদনপৈয় গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান, জিল্লুর রহমান, আকবর আলীসহ কয়েকজন জানান, ‘আমরা বাঁধটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অনেকবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সবাই প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও বাঁধ সংস্কার করা হয়নি।’

শাহাগোলা ইউপির চেয়ারম্যান এস এম মামুনুর রশিদ বলেন, ২০১৫ সালে শাহাগোলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী বেড়িবাঁধের আনুমানিক সাড়ে তিন শ মিটার ভেঙে যায়। এরপর আর বাঁধটি সংস্কার করা হয়নি। বাঁধ সংস্কার না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ একটি ছোট প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একটি বাঁধ নির্মাণ করা অসম্ভব। বাঁধটি সংস্কারের জন্য একাধিকবার পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি। আগামী বর্ষার আগে যেন বাঁধটি মেরামত হয়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

নওগাঁ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফাইজুর রহমান বলেন, ‘আমার জানামতে আত্রাইয়ের ফুলবাড়ী এলাকায় আমাদের কোনো বাঁধ নেই। তবে আগে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নিয়ে বাঁধটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’