পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রেলের জমি দখল করে ভবন, পুকুর

মাঝেমধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানে এলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে দখলদারেরা দিনে দিনে আরও জেঁকে বসেছে। 

রেলের জমি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। কয়েকবার অভিযান চালানো হলেও লাভ হয়নি। সম্প্রতি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বড়াল ব্রিজ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় রেলওয়ের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা স্থাপনা। এলাকার লোকজন বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা দু-তিনতলা ভবন ও বিপণিবিতান করেছেন। একজন কেটেছেন বিশাল পুকুর। অনেকে আবার চড়া দামে বিক্রি করছেন নিজের দখলে থাকা দোকান।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯১৫-১৯১৬ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ করা হয়। ভাঙ্গুড়া বড়াল ব্রিজ স্টেশনও তখন করা হয়। একই সঙ্গে ভাঙ্গুড়া খাদ্যগুদামে পণ্য আনা–নেওয়ার জন্য পৃথক একটি রেললাইন করা হয়। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বড়াল নদের দুই দিকে কয়েক শ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে। এর কিছু জমি থেকে মাটি কেটে রেললাইনে নেওয়া হয়। বাকি জমিগুলো অব্যবহৃত রয়ে যায়। এ জমিগুলো অবৈধভাবে দখলে নিতে থাকেন প্রভাবশালীরা। দিনে দিনে তৈরি হতে থাকে বিপণিবিতান, দোকান, বাড়িসহ কাঁচা-পাকা বিভিন্ন স্থাপনা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের মাঝবরাবর বয়ে গেছে বড়াল নদ। নদের একদিকে বড়াল ব্রিজ স্টেশন, অন্যদিকে ভাঙ্গুড়া বাজার। বাজারের মধ্য দিয়ে চলে গেছে খাদ্য গুদামের পৃথক রেললাইন। তবে দু-একটি লোহার পাতের স্মৃতিচিহ্ন থাকলেও লাইনটি এখন আর নেই। লাইনের দুই পাশে বড় বড় পাকা ভবন, বাড়ি। বাজারের পেছন দিকে রয়েছে রেলওয়ের ফসলি জমি। এই জমি দখলে নিয়ে করা হয়েছে বিশাল পুকুর। অন্যদিকে আবার পুকুর ভরাট করে তৈরি হচ্ছে নতুন বিপণিবিতান, দোকান। 

স্থানীয় লোকজন বলছেন, বড়াল নদের দুই পাশ, ভাঙ্গুড়া বাজারসহ আশপাশে অধিকাংশ জমি রেলওয়ের। উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি একরাম হোসেন ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শওকত আলী পৃথক দুটি দোতলা বিপণিবিতান করেছেন। শওকত আলীর ভগ্নিপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামিম আহম্মেদ করেছেন বেশ কিছু পাকা দোকান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আবুল কালাম আজাদ একটি দোতলা বিপণিবিতান এবং ভাঙ্গুড়া থানার পেছনে তিন একর জমি নিয়ে একটি পুকুর খনন করেছেন। তাঁর পুকুরটি খননের সময় রেল কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা বাধা দিয়েছে। কিন্তু তাতেও পুকুর খনন বন্ধ হয়নি। অন্যদিকে দোতলা বিপণিবিতান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রেল কর্তৃপক্ষ ভেঙে দিলেও তিনি আবার তা ঠিকঠাক করে ভাড়া দিয়েছেন। 

উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, ‘দোতলা পাকা মার্কেট তৈরি করা একপ্রকার ভুলই হয়েছে। এখন রেল কর্তৃপক্ষ ভেঙে দিলে আসলে কিছু করার নেই।’ 

শ্রমিক লীগের সভাপতি একরাম হোসেন বলেন, ‘আমার মার্কেট নেই। তবে দোকান আছে। রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এসব দোকান করা হয়েছে।’ 

অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ থেকে ৪০০ মিটার পূর্বে প্রায় দুই বিঘা পরিমাণ একটি খাল দখল করে ভরাট করছেন ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। অপর একটি পুকুর ভরাট করে রড সিমেন্টের পিলার তুলে ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম এবং পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহির উদ্দিন। এগুলোও রেলওয়ের জমি। 

ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, রেলওয়ের হলেও জমিটি নিচু ছিল। তাই ভরাট করা হয়েছে। 

ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহির উদ্দিন বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই পুকুর ভরাট করা হয়েছে। নরম মাটি, তাই রড–সিমেন্টের পিলার দিয়ে ঘর তৈরি করছেন। 

তবে শুধু দখল, ভরাট, পুকুর কেটে আর ভবন নির্মাণ করেই থামেনি এই প্রতিযোগিতা। দখলের পাশাপাশি অবৈধভাবে তৈরি দোকান কেনাবেচা করছেন অনেকে।

ভাঙ্গুড়া বাজারের ব্যবসায়ী হারুণ অর রশিদ বলেন, পুরো বাজারই গড়ে উঠেছে রেলওয়ের জমির ওপর। বড় বড় ভবন ও বিপণিবিতান তৈরি হয়েছে। বহুদিন ধরেই বিপণিবিতানের দোকান কেনাবেচা চলছে। সম্প্রতি তিনি নিজেও ৩০ লাখ টাকায় দুটি দোকান কিনেছেন। তবে এসব কেনাবেচায় বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে কেনাবেচা চলছে।

হারুণ অর রশিদ আরও বলেন, ‘অবৈধ জেনেও সবাই কেনাবেচা করছেন। তাই ব্যবসার স্বার্থে আমিও দোকান কিনেছি। এখন রেলওয়ে যদি ভেঙে দেয়, তবে কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, রেলওয়ের জমি কেউ যদি ইজারাও নিয়ে থাকেন, তবু সেখানে পাকা ভবন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ভাঙ্গুড়ায় রেলওয়ের জমি দখলমুক্ত করতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। দ্রুতই আবার অভিযান চালিয়ে জমিগুলো দখলমুক্ত করা হবে।