তিন দিন পর দুর্ঘটনাস্থলে রেল মন্ত্রণালয়ের কমিটি, মামলার তদন্ত শুরু পুলিশের

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাক্ষ্য নেন এবং নিয়ন্ত্রণকক্ষ পর্যবেক্ষণ করেন। এ ছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তও শুরু করেছে রেলওয়ে পুলিশ।

রেল মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দলে নেতৃত্ব দেন কমিটির প্রধান রেল মন্ত্রণালয়ের রেলপথ বিভাগের যুগ্ম সচিব (অডিট ও আইসিটি) হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কার ভুল ছিল, তা বের করার চেষ্টা চলছে। ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা–ও দেখা হচ্ছে।

এর আগে গতকাল বুধবার ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের টিম মাঠপর্যায়ের তদন্ত শেষ করে। ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের সদস্যরা প্রথমে দুর্ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে থাকা কেবিন স্টেশনমাস্টার (গ্রেড-৪) জহুরুন্নেছা ও মেন্টেন অব সিগন্যাল কর্মকর্তা শফিকুল আলম খানের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ দেখান। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কারণ, তাঁরা অপর একটি তদন্ত দলের সদস্যদের কাছে সাক্ষ্য দিতে চট্টগ্রামে ছিলেন। শেষে স্টেশনমাস্টার মো. ইউসুফের সাক্ষ্য গ্রহণ করে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ফায়ার সার্ভিসের দল। আজ রেল মন্ত্রণালয়ের কমিটিও জহুরুন্নেছা ও শফিকুল আলমের দেখা পাননি। কারণ, তাঁরা ঢাকায় গেছেন। রেলওয়ের অপর একটি বিভাগ তাঁদের ঢাকায় জরুরি তলব করেছেন।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাঠপর্যায়ের তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ করে আনা হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া, সর্বশেষ গঠন হওয়া জেলা প্রশাসনের কমিটি এখনো মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেনি। তিন সদস্যের কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান।

তবে রেলওয়ে সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার কারণ বিষয়ে আপাতত সবার প্রাথমিক ধারণা এক রকম—সেটি হলো চালকের সিগন্যাল অমান্য। এ ক্ষেত্রে মালবাহী ট্রেনের চালকের ভুলকে সামনে আনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভৈরব স্টেশনের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে মালবাহী ট্রেনটিকে আউটার কিংবা হোম—দুটির কোনোটিতে সবুজ বাতি দেওয়া হয়নি। জ্বালানো ছিল লাল বাতি। দুটি সিগন্যাল অমান্য করে চালক ২ নম্বর লাইন থেকে ক্রস করে ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে রেলওয়ে পুলিশ। মামলায় মালবাহী ট্রেনটির চালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী চালক আতিকুর রহমান ও পরিচালক (গার্ড) মো. আলমগীরকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়। বেপরোয়া, গাফিলতি ও তাচ্ছিল্যভাবে ট্রেন পরিচালনার ধারায় মামলাটি করেন দুর্ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের ছোট ভাই বিল্লাল হোসেন।

আরও পড়ুন

ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলীম হোসেন শিকদার বলেন, প্রাথমিকভাবে মামলার আলোকে তদন্ত হচ্ছে। এজাহারে উল্লেখ থাকা বিষয়গুলোর বাইরেও অন্য বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের পেছনের দুটি বগির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রেনের ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। এ ঘটনায় মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আরও পড়ুন