নোনাপানির বিলুপ্তপ্রায় মাছের চাষ পুকুরে

চিত্রা ও দাতিনা সাধারণত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়। একসময় উপকূলের বিভিন্ন খাল-বিলে মাছ দুটি পাওয়া যেত।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় অবস্থিত নোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা চিত্রা মাছের পোনা তৈরি করে পুকুরেই চাষ করছেন। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

চিত্রা ও দাতিনা মাছের বাস সাগর বা উপকূলীয় নদীতে। চিত্রা বিলুপ্তপ্রায় হিসেবে তালিকাভুক্ত। আর দাতিনা মাছটি উপকূল অঞ্চলে আগের তুলনায় কম পাওয়া যায়। নোনাপানির মাছ দুটি পুকুরে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সাগরের মাছকে পুকুরে চাষের উপযোগী করে তুলেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার পাইকগাছার নোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

পাঁচ বছর ধরে গবেষণাটি করছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি পুকুরে চিত্রা মাছ চাষের পদ্ধতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য চিত্রা মাছের পোনা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। আর দাতিনা মাছ নিয়ে আরও গবেষণার পর পদ্ধতিটি হস্তান্তরের কথা ভাবা হচ্ছে।

চিত্রা ও দাতিনা সাধারণত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়। একসময় উপকূলের বিভিন্ন খাল-বিলে মাছ দুটি পাওয়া যেত। এখন খুব একটা পাওয়া যায় না। পাইকগাছার নোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রে দাতিনা মাছের যে প্রজাতিটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, সেটি সাদা দাতিনা গোত্রের।

গবেষণার শুরু যেভাবে

পাঁচ বছর আগে মাছ দুটির কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তখন শিবসা নদী ও সুন্দরবনসংলগ্ন খাল থেকে পোনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। সেগুলোকে ওই কেন্দ্রের আবদ্ধ পুকুরে প্রচলিত ভাসমান খাবারে অভ্যস্ত করে তোলেন। পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করা হলেও দাতিনা মাছের প্রজননে চূড়ান্ত সাফল্য আসে গত বছরের জানুয়ারিতে। আর চিত্রা মাছের প্রজননে সাফল্য পাওয়া যায় ওই বছরের মে-জুনের দিকে।

বর্তমানে দুটি মাছের কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত পোনা বড় হচ্ছে গবেষণা কেন্দ্রের তিনটি পুকুরে। গত এক বছরে চিত্রা মাছের ওজন হয়েছে ৮০ থেকে ১৫০ গ্রাম। গত বছরের পোনা বড় হওয়ার পর সেই মাছ থেকে আবারও পোনা উৎপাদন করা হয়েছে।

গবেষক দলের কথা

চিত্রা ও দাতিনা মাছ নিয়ে গবেষণা করা দলের সদস্য পাঁচজন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্রপ্রধান মো. লতিফুল ইসলাম। গবেষকেরা জানান, চিত্রা মাছকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। আর দাতিনা মাছকে বিলুপ্তপ্রায় হিসেবে উল্লেখ করা না হলেও এটি আগের চেয়ে তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। এ কারণেই ওই দুটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পুকুরে চাষ করা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।

গবেষণা দলের প্রধান মো. লতিফুল ইসলাম বলেন, চিত্রা ও দাতিনা ৩-৪ পিপিটি (পানিতে লবণাক্ততার পরিমাপক) লবণাক্ত পানিতেও চাষ করা সম্ভব। মিষ্টি পানিতেও চাষ করে দেখা গেছে, মাছ বেঁচে থাকে; তবে বড় হওয়ার মাত্রা কম।