সিলেটে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে উত্তেজনা, কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ

সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জাল ভোট দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে স্থানীয় ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে। বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে।

একাধিক ভোটার অভিযোগ করেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী দলদলি চা-বাগানের দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা পৌনে একটার দিকে যান। তাঁরা বেশ কিছু সময় ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুজাত আলী রফিকের কাপ-পিরিচ প্রতীকে জাল ভোট দেন।

জাল ভোট দেওয়ার খবর পেয়ে চা-বাগানের ভোটাররা এসে কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন ভোটাররা ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের দাবি জানানোর পাশাপাশি এমন পরিস্থিতিতে ভোট দিতে অপারগতা জানান। এ সময় প্রায় সব প্রার্থীর এজেন্টরাও কেন্দ্র ত্যাগ করেন। ঘটনার পর থেকে ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে।

এ ঘটনায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রে এসে শুনেছি, এখানে কিছু জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য দুটি ব্যালট বই বাতিল করা হয়েছে।
ফরহাদ হোসেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাহেল সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি উপজেলার প্রায় সব কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। একই ধারাবাহিকতায় সকালের দিকে তিনি দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান। দুপুরের দিকে তিনি ওই কেন্দ্রে ছিলেন না। কী কারণে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কিংবা কারা এমনটা করেছেন, তা তিনি জানেন না। কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁর নাম এখানে জড়িয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

বেলা পৌনে তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার কারণে পুলিশ, আনসারসহ ভোট-সংশ্লিষ্টরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরের মাঠে ভোটাররা জটলা বেঁধে আছেন। কেউ ভোট দিতে আসছেন না। এমনকি অধিকাংশ প্রার্থীর এজেন্টরাও কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পলাশ কুমার দত্ত বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রের তিনটি বুথে মোট ভোটার ১ হাজার ১৮৪। উত্তেজনা শুরু হওয়ার আগে এখানে ৩৮০ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোট গ্রহণ আপাতত বন্ধ আছে। কী কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল, এ প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রের সামনে সিলেট সদর উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রে এসে শুনেছি, এখানে কিছু জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য দুটি ব্যালট বই বাতিল করা হয়েছে। এখন এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে।’

তবে দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নবনিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ মোস্তফা বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে প্রথম আলোকে জানান, পুনরায় ভোট শুরু হওয়ার পর কোনো ভোটার আর ভোট দিতে আসেননি।