আলুর পাশাপাশি আউশের বীজ উৎপাদনে চমক

২৪০ একর জমিতে আউশের ভিত্তিবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিনা-২১, ব্রি-৪৮ ও ব্রি-৯৮ ধানের আবাদ করা হয়।

  • ২৪০ একর জমিতে প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন ধানবীজ হবে এবং অধানবীজ হবে আরও ৭০ মেট্রিক টন।

  • আউশ ধান বিক্রি হবে দুই কোটি টাকার ওপরে।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ভিত্তি আলুবীজ খামারে আউশের ধানবীজও উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি আউশ মৌসুমে ৩৫০ মেট্রিক টন ভিত্তি ধানবীজ উৎপাদনের আশা করছেন বিএডিসির কর্মকর্তারা। পাশাপাশি অধানবীজ পাওয়া যাবে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য দুই কোটি টাকার ওপরে।

বিএডিসি খামারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিত্তি আলুবীজ উৎপাদনের জন্য ৬৫০ একর জমিতে এ বিশেষায়িত খামার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিবছর আলু আবাদের পর সীমিত পরিসরে গম এবং কিছু জমিতে ধঞ্চে চাষের পর বেশির ভাগ জমি পতিত পড়ে থাকত। এবার ২৪০ একর জমিতে আউশের ভিত্তিবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিনা-২১, ব্রি-৪৮ ও ব্রি-৯৮ ধানের আবাদ করা হয়। এ ছাড়াও আমন আবাদ করা হয়েছে ৫৩ একর জমিতে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনারায় ইউনিয়নে অবস্থিত ‘ডোমার ভিত্তি আলুবীজ খামার’–এ গিয়ে দেখা যায়, খামারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাকা সোনালি ধানের মাঠ। কোথাও ধান কেটে চাষ দেওয়া হয়েছে জমি। এ সময় কৃষিশ্রমিক রেয়াজুল ইসলাম (৩০) বলেন, এই সময়ে সাধারণত এলাকায় কোনো কাজ থাকে না। তাই অলস সময় পার করতে হয়, সংসারে চলে অনটন। খামারে আউশ ধানের চাষ শুরু করায় এখানে কাজ করতে পারছেন। আগে তো আলু লাগানোর সময় কাজ হতো। তারপর বাইরে কাজ খুঁজতে হতো। এখন খামারে মোটামুটি ১২ মাস কাজ পাচ্ছেন। এই খামারে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিনের হাজিরায় পান ৫০০ টাকা।

খামারের সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, আগে খামারে বছরে দুটি ফসল হতো। একটি হলো ভিত্তি আলুবীজ, অপরটি গম। এখন আউশ ধানবীজ আবাদ শুরু হওয়ায় বছরে তিনটি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু জমিতে সবুজ সারের জন্য ধঞ্চে চাষ করা হচ্ছে। আউশ ধান কাটার পর ওই জমিতে আগাম আলু চাষ করা যাবে। আগাম আলু চাষের জন্য কৃষককে জমি পতিত রাখতে হবে না। তাতে জমির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধি পাবে। জমিতে চাষ কম লাগবে। আগাছা কম হবে। আলু আবাদে ব্যাকটেরিয়াজাতীয় রোগবালাই কমবে। আউশ আবাদে সেচও কম লাগে। ফলন পাওয়া যায় ভালো।

খামারের সহকারী পরিচালক সাজু মিয়া বলেন, আউশ ধানবীজ বপনের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল ওঠানো যায়। খরাসহিষ্ণু হওয়ায় বৃষ্টির পানি ছাড়া তেমন কোনো সেচের প্রয়োজন হয় না। খেতে আগাছা কম হয়, কোনো কোনো জাত নিজেই আগাছা দমনের যোগ্যতা রাখে। এ ধান আবাদে তেমন উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘায় এর ফলন হয় প্রায় ১৮ মণ। একই জমিতে ধান কেটে আমনের আবাদ করা সম্ভব হয়। আবার উঁচু জমিতে আউশের পর আগাম সবজি চাষ করা যায়।

খামারের উপপরিচালক মো. আবু তালেব মিঞা বলেন, খামারে একনাগাড়ে আলুবীজ চাষ করায় রোগব্যাধি বাড়ছে। আউশ আবাদের পর ওই জমিতে আলু চাষ করলে ব্যাকটেরিয়াজাতীয় রোগবালাই কমবে। এলাকায় আউশবীজ উৎপাদনে বীজসংকট কাটবে। ২৪০ একর জমিতে প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন ধানবীজ হবে এবং অধানবীজ হবে আরও ৭০ মেট্রিক টন। প্রতি টন ধানবীজের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। এতে করে আউশ আবাদে ধান বিক্রি হবে দুই কোটি টাকার ওপরে। এ ছাড়া এলাকার দুই শ থেকে তিন শ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

এদিকে প্রতিবছরই জেলায় কমছে আউশ ধানের আবাদ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, চলতি বছর জেলায় ১ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। ২০২১ সালে হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে আর ২০২০ সালে আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কৃষকেরা ধানের চেয়ে ভুট্টায় লাভ বেশি পাওয়ায় ভুট্টা চাষ করছেন। কিন্তু আউশ আবাদে বেশি উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। সেচ খুবই কম লাগে। সে কারণে এর উৎপাদন খরচও কম। আউশ তুলে ওই জমিতে আগাম আলুসহ শীতকালীন সবজি চাষ করলে কৃষকেরা বেশি লাভবান হবেন। আউশ ধানের আবাদ বাড়ানোর ব্যাপারে তাঁরা কৃষকদের উৎসাহিত করে যাচ্ছেন।