উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু পঞ্চগড়ের জনজীবন

নতুন বছরের শুরুতে দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। সকালের শীতে বাড়ির বাইরে খড়কুটো জ্বালিয়ে ওম খোঁজার চেষ্টা সাধারণ মানুষের। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রাতভর হিমেল বাতাস, ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরা কুয়াশা থাকছে সকাল পর্যন্ত। দিনভর ঠান্ডা বাতাস আর কুয়াশার দাপটে সূর্যের তীব্রতা ছড়াতে না পাড়ায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। কাবু হয়ে পড়ছে জনজীবন। পৌষের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে এখন এমনই আবহাওয়া।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল না। ওই দিন সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল শ্রীমঙ্গলে।

গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শুরু হয় হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশা। এতে অনুভূত হতে থাকে কনকনে শীত। রোববার দিনভর উত্তরের হিমেল বাতাস থাকায় ছড়াতে পারেনি সূর্যের তীব্রতা। এতে কমে যায় দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান। রোববার রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশা থাকায় শীতে কাবু হয়ে পড়ছে উত্তরের এই জনপদের মানুষ। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। জেঁকে বসেছে শীত। শীতের দাপট বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

সকালে ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। কনকনে শীত অনুভূত হওয়ায় কাজে বেঘাত ঘটছে খেটে খাওয়া মানুষের। সকালবেলা ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়া মানুষ গরম কাপড় পরে বের হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার চানপাড়া এলাকায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন সমারু বর্মণ (৬৫)। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এত দিন তকা (থেকে) ঠান্ডা (শীত) বোঝায় যায়নি বাপু। কিন্তু দুই দিন তকা এ্যানং ঠান্ডা হাত-পাও পটপটাছে। ঠান্ডাতে রহিবা পারুনা, এইতানে (এ জন্য) আগুন বালিছু (জ্বালাইছি)।’  
আজিমুল ইসলাম (৪০) নামের একজন ভ্যানচালক বলেন, ‘এত দিন তো ভালয় আরামে রহিনো। সারা দিন রোদ আর রাতিত কনেক (একটু) করে ঠান্ডা। আইজকা ভ্যান নিয়ে বাহির হনুতে (হলাম) হাত-পাও লা ককোড়া হয় আসেছে। বাতাসখান শিলশিল করে কানোত (কানে) লাগেছে। আজি বধে (মনে হয়) আর বেলা (সূর্য) উঠিবেনি।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, তেঁতুলিয়ার আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পুরোপুরি আসছে না। এ জন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরের হিমেল বাতাস এই জনপদে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। জানুয়ারি মাসজুড়ে এই এলাকায় একই রকম আবহাওয়া থাকতে পারে বলে তিনি জানান।