ভাসানচরকে হাতিয়ার দাবি করে হান্নান মাসউদের পোস্ট, সমালোচনায় সন্দ্বীপের বাসিন্দারা

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদফেসবুক থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় সীমানা বিরোধ নিরসনের প্রচেষ্টার মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে আলোচনার জন্ম হয়েছে। আজ সোমবার ফেসবুকে সন্দ্বীপ সংলগ্ন হাতিয়ার ভাসানচরের মালিকানা নিয়ে মাসউদ পোস্টটি করেন। পোস্টে তিনি ভাসানচরকে হাতিয়ার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর ব্যতিক্রম রুখতে হাতিয়াবাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের আহ্বান জানান। তাঁর এই পোস্ট ঘিরে সন্দ্বীপের ছাত্র, তরুণসহ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

মাসউদের পোস্ট শেয়ার করে কেউ কেউ তাঁকে সন্দ্বীপের ইতিহাস পাঠের আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ কেউ তাঁকে সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পদাঙ্ক অনুসরণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের পোস্ট
ফেসবুক থেকে নেওয়া

আজ বেলা একটার দিকে মাসউদ ফেসবুকে লেখেন, ‘ভাসানচর হাতিয়ার ছিল, হাতিয়ারই থাকবে। দরকার শুধু ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ।’ বিকেল পাঁচটার মধ্যে মাসউদের পোস্টটি দেড় হাজার শেয়ার হতে দেখা যায়। ততক্ষণে পোস্টে সাড়ে চার হাজারের বেশি লিখিত প্রতিক্রিয়া (কমেন্ট) লক্ষ করা গেছে। অনেক কমেন্টকারী কমেন্টের সঙ্গে সন্দ্বীপের পুরোনো মানচিত্র জুড়ে দিয়ে মাসউদকে ভালোভাবে তা দেখে নিতে বলেছেন।

মাসউদের পোস্ট শেয়ার না করেও অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীকে নিজেদের ওয়ালে মাসউদের লেখার প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। এক ব্যবহারকারী লেখেন ‘এটা সবার বাংলাদেশ, ভিটেমাটির অধিকার হরণের দিন শেষ।’

উল্লেখ্য, সন্দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি ২০১০ সালের দিকে নতুন ভূমি জেগে ওঠে। ২০১৭ সালের দিকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আলোচনার মধ্যেই সেটির নামকরণ হয় ভাসানচর। একই বছর দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে সেটিকে নোয়াখালীর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সেখানে ‘ভাসানচর থানা’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রজ্ঞাপনেও ভাসানচরকে হাতিয়া ও নোয়াখালীর অংশ বলে উল্লেখ করা হলে সন্দ্বীপের ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তখন বিক্ষোভ করেন।

ভাসানচর
ফাইল ছবি

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে একতরফাভাবে ভাসানচরকে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে মনে করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। আন্তজেলা সীমানা নির্ধারণের পদ্ধতিগত নীতি অনুসরণ করা হয়নি বলেও সে সময় সন্দ্বীপের লোকজন দাবি তুলেছিলেন।

সম্প্রতি সন্দ্বীপের বিভিন্ন স্তরের মানুষের দাবির মুখে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১০ এপ্রিল সেই কমিটির একটি দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।

এ অবস্থায় দ্বিতীয় সভা সামনে রেখেই আব্দুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমানা বিরোধ নিরসনে গঠিত কমিটির সদস্য সালেহ নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতে ভাসানচরের সীমানা জটিলতা দূর করার কাজ চলছে। ব্যক্তিবিশেষের এখানে কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে আব্দুল হান্নান মাসউদের প্রতিক্রিয়া জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাঁর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।