পেঁয়াজে লাভ, বাড়ছে আবাদ

ভালো দাম পাওয়ায় শরীয়তপুরের কৃষকেরা বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করছেন। কৃষকেরা প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা লাভ করছেন।

পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এই ফসল আবাদ করে এখন আর কৃষকের লোকসান হয় না। লাভ হওয়ায় কয়েক বছর ধরে শরীয়তপুরের কৃষকেরা পেঁয়াজের আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে গত চার বছরে এই জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন বেড়েছে।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার ৩ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছিল। ওই বছর ৩৭ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল।

২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে ৪৩ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭১ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ৪৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) ৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। এই মৌসুমে ৫৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অক্টোবর মাসে জমিতে পেঁয়াজ আবাদ শুরু করেন কৃষকেরা। আবাদ চলে ডিসেম্বরের মধ্য পর্যন্ত। যাঁরা আগে আবাদ করেন, তাঁরা তা আগেই উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে বাজারে নতুন পেঁয়াজের দাম ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। আর পুরোনো পেঁয়াজের দাম ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, পাঁচ বছর আগেও জেলার কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারতেন না। কিন্তু তিন থেকে চার বছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এ কারণে কৃষকেরা অন্য ফসল ছেড়ে পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

পেয়াঁজ উৎপাদনে খরচ ও লাভ কেমন হয়, এই প্রশ্নের জবাবে এক কৃষক বলেন, বীজ, সার, বালাইনাশক, সেচ, শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদনে কৃষকের ৩৫ থেকে ৪০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই হিসাবে প্রতি কেজিতে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা লাভ হচ্ছে।

কৃষক জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করছেন। সম্প্রতি জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে তোলা
ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

জাজিরার নাওডোবা এলাকার কৃষক তোফাজ্জেল হোসেন দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। ওই কৃষকের প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। তিনি ইতিমধ্যে ১ বিঘা জমির ১ হাজার ৫৫০ কেজি পেঁয়াজ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

তোফাজ্জেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন-চার বছর ধরে পেঁয়াজ উৎপাদন করে আমরা লাভের মুখ দেখছি। আগে উৎপাদন খরচ তুলতে পারতাম না। লোকসান ঠেকাতে জমিতে তাই অন্য ফসল ফলাতাম। চার বছর ধরে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে লাভ করছি।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শরীয়তপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শরীয়তপুরে বছরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। আর কৃষক উৎপাদন করছেন অন্তত ৫০ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজগুলো ঢাকার বাজারে বিক্রি করা হয়। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এখন কৃষক পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকছেন।