স্বাদে ভালো লাগা থেকে কৌতূহল, কয়েস এখন ‘ড্রাগনচাষি’

সারি বাঁধা ড্রাগন ফলের গাছ। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আরেঙ্গাবাদেছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় ছেলের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে নতুন একটি ফল খেতে দেওয়া হয় তাঁকে। স্বাদ ভালো লাগায় ফলটি সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়। ফলটির খোঁজখবর, তত্ত্ব-তালাশ নেওয়া শুরু করেন। যতটুকু জানতে পারেন, সেটুকু পুঁজি করেই শুরু করেন সম্পূর্ণ অপরিচিত এই ফলটির চাষ। এরপর আর থেমে যেতে হয়নি। ফলটি সম্পর্কে কৌতূহল মেটাতে গিয়ে এখন পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ‘ড্রাগনচাষি’ হয়ে গেছেন কয়েস আহমদ (৬৫)।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদের বাসিন্দা কয়েস আহমদ এখন ড্রাগনের সঙ্গেই আছেন। পুরোনো বাগানে আটকে না থেকে তিনি গড়ে তুলেছেন নতুন আরেকটি ড্রাগন ফলের বাগান।

কয়েস আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকায় ছেলের বাসায় ড্রাগন ফল খাওয়ার পর এটির বিষয়ে তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়। কিছু খোঁজখবর নেওয়ার পর মাস ছয়েকের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ফলটি চাষ করার। এ জন্য ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি, পরিচর্যা নিয়ে ইউটিউবে খোঁজ নিতে থাকেন। অনলাইনে খোঁজ নিয়ে নাটোর থেকে ৪০০ ড্রাগনের কাটিং (চারা) সংগ্রহ করেন। এরপর ২০২০ সালের অক্টোবরে আরেঙ্গাবাদে বাড়ির পাশে ১৫ শতক জমিতে রোপণ করেন ড্রাগনের চারা। এর ১৮ মাস পর বাগানজুড়ে হাসতে থাকে ড্রাগনের ফুল, আসে ফল। ২০২২ সালে এক মৌসুমে ফল ধরে। সেবার নতুন ফল হিসেবে পরিচিতজনদের দিয়েথুয়ে ৭০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন কয়েস আহমদ। এরপর গত বছর এক মৌসুমে আসা ফল বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।

ড্রাগনের চারা, পুরোনো টায়ার সংগ্রহ, পাকা খুঁটি তৈরি, মাটি তৈরিতে কয়েস আহমদের খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। নতুন চাষি হওয়ায় শুরুতে বুঝতে না পারায় এত বেশি টাকা খরচ হয়েছে বলে মত তাঁর। তিনি বলেন, এখন খরচ শুধু জৈব সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, সপ্তাহে একবার অপ্রয়োজনীয় কুশি কেটে ফেলা। এ জন্য মাসে দেড় হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ ছাড়া ফলের মৌসুমে সার্বিক কাজের জন্য দুজন নিয়মিত শ্রমিক কাজ করেন। ড্রাগন বিক্রি করতেও তাঁর কোনো ঝামেলা নেই। স্থানীয় কাঁঠালতলি, দক্ষিণভাগ, জুড়ী বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এসে তাঁর কাছ থেকে ড্রাগন কিনে নেন। প্রতি কেজি ফল ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করেন।

কয়েস আহমদ জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ড্রাগন চাষ সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতাজনিত দক্ষতা অনেকটাই বেড়েছে। প্রায় ছয় মাস আগে নতুন করে ৩০ শতাংশ জমিতে আরেকটি ড্রাগনবাগান গড়ে তুলছেন। সে বাগানে খুঁটি, টায়ার ও চারা লাগানো শেষ। নতুন বাগানে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অনেককে চারা দিছি। তাঁদের ড্রাগন চাষ করতে উৎসাহিত করি। এটা এলাকায় নতুন ফল হলেও এর অনেক চাহিদা আছে।’ স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজন তাঁকে এখন নিয়মিত পরামর্শ, সহযোগিতা করেন বলে জানান তিনি।

নিজের ড্রাগন ফলের বাগানে পরিচর্যায় কয়েস আহমদ। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আরেঙ্গাবাদে
ছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি আরেঙ্গাবাদে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েস আহমদের বাড়ি-সংলগ্ন জমিতে ড্রাগনবাগানে পাকা খুঁটি জড়িয়ে আছে গাছগুলো। সারি বাঁধা গাছগুলো দুপুরের রোদে ঝকমক করছিল। কিছু গাছে ড্রাগন ফল ঝুলছিল। বাড়ি থেকে কিছুটা দক্ষিণে পাঁচ-সাত মিনিটের হাঁটা দূরত্বে তাঁর নতুন ড্রাগন ফলের বাগান। সেখানে পাকা খুঁটির মাথায় টায়ার স্থাপন এবং খুঁটির গোড়ায় ড্রাগনের চারা রোপণ করা আছে।

বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এলাকার অনেক কৃষককে এনে এই ড্রাগনবাগানটি দেখাচ্ছি। উপজেলার অন্তত ২০০ জনকে পারিবারিক পুষ্টি পূরণের জন্য কাটিং দিয়েছি, চারা দিয়েছি। ড্রাগন গাছ সাধারণত ২০-২৫ বছর ধরে ফল দিতে থাকে। ডাল থেকে চারা করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দুই-তিন বার ফুল আসে, ফল ধরে। এক মাসে ফল পেকে যায়। গরম মৌসুমে ফল ভালো হয়। বড়লেখায় অনেক টিলা জায়গা আছে। এখানে ড্রাগনের উৎপাদন ভালো হবে।’