বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিককে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাহীনুর রেজা ও সৌরভ মেহেরাব (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি আশিকুর রহমানকে মারধর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীনুর রেজাসহ কয়েক নেতা। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে সজীব হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমরা ঘটনার লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযুক্ত শাহীনুর রেজা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের অনুসারী এবং শামসুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও সাংবাদিকের ওপর হামলা, নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরসহ একাধিক অভিযোগ আছে। আগের ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও একটিরও বিচার হয়নি।

আশিকুর রহমানকে মারধরের ঘটনার একটি ফুটেজ প্রথম আলোর হাতে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ২টা ৪৬ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে সজীব হোটেলে খাবার খেতে যান সাংবাদিক আশিকুর রহমান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা শাহীনুর রেজা, সৌরভ মেহেরাবসহ আরও কয়েকজন নেতা–কর্মী ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে আশিকুর রহমানকে দোকানদারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ওই সময় শাহীনুর রেজা ও সৌরভ মেহেরাব পেছন থেকে আশিকুর রহমানকে এলোপাতাড়ি মারতে মারতে সড়কের মধ্যে নিয়ে আসেন।

আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অর্ডার (ফরমাশ) করা খাবারটি শাহীনুর রেজা পার্সেল হিসেবে নিয়ে নেন। এ নিয়ে আমি দোকানদারের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সে সময় পেছন থেকে শাহীনুর ও সৌরভ আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেন। আমি বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিলে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।’

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ শাহীনুর রেজা বলেন, খাবার নিয়ে আশিকুরের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি ও কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। সেখানে মারামারির ঘটনা ঘটেনি। আরেক অভিযুক্ত সৌরভ মেহেরাব বলেন, ‘খাবার নিয়ে শাহীন ভাইয়ের সাথে তাঁর (আশিকুর) কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শাহীন ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি শুরু করলে আমি তার গায়ে হাত তুলি।’

আশিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিষয়বস্তু জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখা ওয়ালী আসিফ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক মারধরের বিষয়ে তিনি জানেন না। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৬ মার্চের একটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখাকে কেন্দ্র করে গত ২৮ মার্চ বিকেলে সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় তাঁদের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ভিডিও করায় এক সাংবাদিককে মারধর করেন শাহীনুর রেজাসহ আরও অনেকে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। এ ছাড়া গত বছর মধ্যরাতে এক নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের সঙ্গে শাহীনুর রেজার সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।