চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, আসামি আওয়ামী লীগ নেতারা

আলম আলীর লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। গতকাল দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মো. আলম আলীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে শিবগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত আলম আলী নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিয়নের নবাব মোড় এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতা মো. আলম আলী
ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় আলম আলীর ছোট ভাই বাবুল আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল বিতরণ করে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন আলম আলী। বেলা সোয়া একটার দিকে বাড়ির কাছে নবাব মোড়ে এলে আবদুস সালামের নেতৃত্বে আসামিরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। পাশেই বেশকিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে লোকজন পালিয়ে যান। এরপর নানা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে আলম আলীকে হত্যা করা হয়। মামলায় আবদুস সালামকে এক নম্বর ও আবদুর রহমানকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে।

অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, স্থানীয় গ্রাম্য রাজনীতি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেনি। ইউপি নির্বাচনের সময় আলম আলীর সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইউপি সদস্য মো. আংগুরের দ্বন্দ্ব ছিল বলে শুনেছেন।

আরও পড়ুন

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের তৎপরতা চলছে। এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশের টহল রয়েছে। এলাকাটি দীর্ঘদিন থেকেই সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত বলে মন্তব্য করেন ওসি।

চাচা বাবুল আলীকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন আলম আলীর দুই মেয়ে বর্ষা খাতুন ও বিথি খাতুন। গতকাল দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

এলাকা থমথমে, বাড়িতে আহাজারি

নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় লোকজনের চলাচল খুবই কম। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকজনের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

ঘটনাস্থলে টহল পুলিশ দেখা যায়। সেখানে কথা হয় শিবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শিহাবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমাদের আরও কয়েক দিন এলাকায় টহল বজায় রাখতে হবে। এলাকাটিতে বহু সন্ত্রাসী ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

সুন্দরপুর গ্রামে আলম আলীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, চাচা বাবুল আলীকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন আলম আলীর দুই মেয়ে বর্ষা খাতুন ও বিথি খাতুন (২৩)। মেঝেতে বসে কাঁদছিলেন বড় মেয়ে আলেয়া বেগম (৩০)। বর্ষা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

বাবুল আলী বলেন, ইউপি নির্বাচনের সময় থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর পর থেকে তিনি খুব সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতেন। এর মধ্যেই ঘটল নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাই আলম আলীকে দিনদুপুরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।