সভাপতি, সম্পাদক দ্বন্দ্বে দলে অস্থিরতা 

  • যুবদল নেতার গণসংবর্ধনা নিয়ে এখন সভাপতি ও সম্পাদকের দ্বন্দ্ব বেড়েছে।

  • এই নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব দলের অন্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। 

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিন। তিনি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর সন্তান। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ায় আগামীকাল রোববার উপজেলা বিএনপি তাঁর জন্য গণসংবর্ধনার আয়োজন করছে। সংবর্ধনা প্রস্তুতিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানের সায় আছে। তবে এতে সায় নেই দলটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খানের।

যুবদল নেতার গণসংবর্ধনা আয়োজন নিয়ে এখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন করে মাত্রা পেয়েছে। এই নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব দলের অন্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। 

সংবর্ধনা প্রস্তুতিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানের সায় আছে। তবে এতে সায় নেই দলটির সভাপতি তোফাজ্জলের।

কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি হবে রোববার বিকালে কটিয়াদীর স্বপ্নকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারে। এ জন্য নানা প্রক্রিয়ায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে। উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠানটি হতে চললেও প্রচারপত্রে সভাপতি তোফাজ্জলের নাম নেই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করানো হবে সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানকে দিয়ে। প্রচারপত্রে আরিফুরের নাম উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টিকে সহজভাবে নেননি তোফাজ্জল। তিনি এরই মধ্যে ইস্যুটি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভা করেন। সভাটি হয়েছে দলীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাঁকে পাশ কাটিয়ে বড় আয়োজন করার নিন্দা জানান। দলের মধ্যে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য তিনি আরিফুর ও সংবর্ধিত হতে চলা যুবদল নেতা রুহুল আমিনকে দায়ী করেন। গত বৃহস্পতিবারের সভায় সাধারণ সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। 

পুরো বিষয় নিয়ে কথা হয় তোফাজ্জলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কটিয়াদীর বিএনপির রাজনীতি নষ্ট করছে আরিফুর। তাঁর সঙ্গে আছেন রুহুল আমিন। রুহুল আমিনের সংবর্ধনা। তা–ও আয়োজন করছে বিএনপি। আমি সভাপতি। অথচ আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। সুতরাং এই অবস্থা মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।’

বৃহস্পতিবারের সভার সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা চাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান না হোক। এরপরও যদি হতেই হয়, সেখানে বিএনপির নাম ব্যবহার না করা হোক।’

এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানের ভাষ্য, ‘সভাপতি কোনো দিনও আমার রাজনৈতিক ভালো চাননি। পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি তাঁর নেশা হয়ে গেছে। সমস্যা হলো, সভাপতির ধারণা, দলে রুহুল আমিন আমাকে সহযোগিতা দেন। এ কারণে রুহুল আমিন তাঁর পছন্দ নয়। রুহুল আমিনের কোনো অনুষ্ঠানে সভাপতি আসবেন না—এই সত্য প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তাঁকে জানিয়ে কী লাভ?’

দলীয় সূত্র জানায়, তোফাজ্জল ও আরিফুর একসঙ্গে লম্বা সময় ধরে দলের নেতৃত্বে আছেন। তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে ২০২১ সালের শুরুর দিকে। সেই সময় ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে দুজনের মতের অমিল হয়। কমিটি গঠনে সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছা গুরুত্ব পাচ্ছিল না। বিপরীতে সভাপতির চাওয়া বাস্তবায়িত হচ্ছিল। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি সাধারণ সম্পাদক। তখন ক্ষোভে তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে একাধিক পোস্ট দেন। প্রতিটি পোস্ট যায় সভাপতির বিরুদ্ধে। তখন থেকে দুজনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। দলীয় কর্মসূচি পালন হচ্ছিল পৃথকভাবে। বিভাজনের রাজনীতিতে একপর্যায়ে সভাপতির কাছে হেরে যান আরিফুর। আরিফুরের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে জেলা কমিটি আরিফুরকে পদ থেকে সরিয়েও দেন। পরবর্তী সময়ে আরিফুরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করে জেলা কমিটি। পদে ফিরিয়ে আনলেও সভাপতির সঙ্গে আরিফুরের আর সম্পর্কের তেমন উন্নতি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুহুল আমিনের সংবর্ধনা নিয়ে দুই নেতার বিরোধের আগুনে নতুন করে ঘি পড়েছে। সংবর্ধনা ঘিরে দলে বিভাজনের রাজনীতি নতুন করে জনসমক্ষে আসায় বিব্রত সংবর্ধিত হতে চলা যুবদল নেতা রুহুল আমিন। জানা গেছে, পরিস্থিতি যত ঘোলাটেই হোক, সংবর্ধনা গ্রহণ করতে রোববার তিনি কটিয়াদী আসছেন। 

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন, জানতে কথা হয় রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোববার আমি নিজ এলাকায় যাব। কেউ যদি আমাকে বরণ করতে আসে, তা–ও গ্রহণ করব। মাঝখানে কী ঘটছে, তা দেখার বিষয় নয়।

সভাপতির বিরোধিতার বিষয়ে রুহুল আমিনের ভাষ্য, ‘ছয় মাস আগে আমার মা মারা গেছেন। যতটুকু জানি, জানাজায়ও সভাপতি ও তাঁর অনুগতরা আসেননি। সুতরাং সংবর্ধনায় আসবে কি না, এ নিয়ে বিশেষ ভাবনা নেই।’

ঘোলাটে পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সঙ্গে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সৃষ্ট বিভাজনকে তিনি বড় করে দেখতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির ব্যানারে আয়োজন করা নিয়ে সভাপতির ভিন্নমত ছিল। আমি বলে দিয়েছি বিএনপি বাদ দিয়ে অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে আয়োজনটি করার। তখন নিশ্চয় এ নিয়ে আর কারও সমস্যা থাকবে না।’