টাঙ্গাইলে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকে আগেই উঠছে আনারস

পাশাপাশি দুটি খেতে আনারস লাগানো হয়েছিল। রাসায়নিক প্রয়োগের কারণে একটিতে আগেই পেকে উঠেছে আনারস। গত মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিঘলবাইদ গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পবিত্র রমজান মাসে বাজারে আনারসের চাহিদা বেড়ে যায়। এই বাজার ধরতে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চাষিরা মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করে মৌসুমের আগেই ‘জলডুগি’ জাতের আনারস পরিপক্ব করে তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আনারসের স্বাদ নষ্ট হচ্ছে। রাসায়নিকযুক্ত আনারস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মধুপুরে ক্যালেন্ডার ও জলডুগি আনারসের আবাদ হয়। এবার মধুপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে জলডুগি জাতের আনারস চাষ করা হয়েছে। প্রায় তিন মাস পর এই আনারস বাজারে আসার কথা।

স্থানীয় চাষিরা জানান, জলডুগি জাতের আনারস জুনের দিকে পরিপক্ব হয়। আকারে ছোট হওয়ায় এই জাতের আনারস বাজারজাতকরণ সহজ হয়। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে রাসায়নিক প্রয়োগ করে গাছে ফুল আনা, দ্রুত বড় করার প্রক্রিয়া শুরু হয় কয়েক মাস আগেই। সর্বশেষ পাকানোর জন্যও রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারায় ৬০টি পাতা হওয়ার পর আনারস ধরে। কিন্তু ২৪ থেকে ২৫টি পাতা হওয়ার পরই ফল ধরার জন্য চারায় রাইপেন, ইথিপ্লাসসহ ইথোফেন গ্রুপের রাসায়নিক দেওয়া হয়। এতে ফল দ্রুত আসে। পরে ফল বড় করার জন্য প্ল্যানোফিক্স, সুপার ফিক্সসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দেওয়া হয়। বড় হওয়ার পর আনারস পাকানো ও আকর্ষণীয় করতে আবার রাইপেন, ইথিপ্লাসসহ ইথোফেন গ্রুপের নানা রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরে ওই আনারস বাজারে তোলা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। ক্ষতিকর ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত সোমবার মধুপুরগড় এলাকার মহিষমারা, গারোবাজার, আউশনারা, ভবানীরটিকি, ঘুঘুর বাজার, কুড়িবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, খেতভর্তি আনারস অসময়েই পরিপক্ব হয়ে গেছে।

কুড়িবাড়ি এলাকার কৃষিশ্রমিক হায়দার আলী বলেন, ১৬ লিটার পানিতে ২ থেকে ৩ বোতল রাসায়নিক মিশিয়ে স্প্রে করেছেন। এতে দুই থেকে চার দিনের মধ্যেই সব আনারস পেকে যাবে। একসঙ্গে পুরো খেতের আনারস বিক্রি করা যাবে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, অনুমোদিত রাসায়নিক প্রতি লিটারে ১ মিলি ব্যবহারের পরামর্শ কৃষকদের দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা তা মানেন না।

ভবানীরটিকি গ্রামের আনারসচাষি আবদুল হালিম বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বাইরের অনেক লোক মধুপুরে জমি ভাড়া নিয়ে আনারস চাষ করছেন। তাঁরা বেশি লাভের আশায় আনারসে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন।

গারোবাজার আনারসের পাইকারি আড়তের ব্যবসায়ী হিসাব আলী বলেন, রোজা শুরু হওয়ার পর প্রতিটি জলডুগি আনারস ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রোজা শেষে এর দাম অর্ধেকে নেমে আসবে। অতিরিক্ত লাভের আশায় চাষিরা হরমোন ও রাসায়নিক প্রয়োগ করে আনারস দ্রুত পরিপক্ব করে রোজার শুরুতেই বাজারে তুলেছেন। রোজা যত শেষ হয়ে আসছে, দাম ততই কমছে।

মধুপুরে নিরাপদ আনারসচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বলেন, অতিরিক্ত লাভের আশায় চাষিরা মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন। এতে আনারসের স্বাদ ও সুগন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা কৃষকদের অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করেন বলে অভিযোগ এই চাষির।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আজিজুল হক বলেন, মাত্রাতিরিক্ত হরমোন ব্যবহারে উৎপাদিত আনারসের আসল স্বাদ একেবারেই থাকে না।