বিজ্ঞানচর্চা সবার জন্য উন্মুক্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান মেলায় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের তিন সদস্য। তাঁরা রুয়েটের সিএসই বিভাগের ছাত্র। রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

‘এখন সবাই বিজ্ঞান নিয়ে ভাবে, কাজ করে। সবকিছুর মধ্যেই বিজ্ঞান আছে। বিজ্ঞানমনস্ক হতে শুধু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হতে হবে, এমনটা নয়। কলা ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও বিজ্ঞান চর্চা করতে পারে। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।’

বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মালা খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। গতকাল রোববার শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) এই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মালা খান সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।

দুই দিনের এই মেলার দ্বিতীয় দিন রোববার প্রজেক্ট শো কমপিটিশন, পোস্টার প্রেজেন্টেশন, ওয়াল ম্যাগাজিন, সায়েন্টিফিক স্পিচ কম্পিটিশন, রুবিকস কিউব, পেইন্টিং কম্পিটিশন, তিন মিনিটে থিসিস প্রেজেন্টেশন ছাড়াও সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল স্টার ভিজ্যুয়ালাইজেশন, থ্রিডি, ফোরডি, সিক্স ডি ও নাইন ডি মুভি শো এবং স্টেজ সায়েন্স শো দেখার সুযোগ। বিজ্ঞান মেলায় দশটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিষয়ে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম তিনজনকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, টি-শার্ট এবং চ্যাম্পিয়নদের প্রাইজমানি দেওয়া হয়।

মাত্র ৮ দশমিক ১৭ সেকেন্ডে রুবিকস কিউব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাদী রহমান। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফ রহমান এটা মেলাতে সময় নিয়েছে ৪০ সেকেন্ড। তার মা ওয়াহিদা পারভীন তাতেই খুশি। তিনি শেষ পর্যন্ত ছিলেন এই মেলায়।

রাজশাহী ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাবের আয়োজনে ‘আরইউএসসি ন্যাশনাল সায়েন্স ফিয়েস্টা-২০২২’ শীর্ষক এই বিজ্ঞান মেলায় দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ  নেয়। মেলায় অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের মা-বাবাদের মাতামাতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন জালাল উদ্দিন সরকার, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের কর্মকর্তা সৈকত সরকার, ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি আবিদ হাসান। সঞ্চালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল লতিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন আরা নিশু।

ক্লাবের সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব বিজ্ঞান বিষয়টিকে জনপ্রিয় করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আয়োজন করে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় এই বছর ষষ্ঠবারের মতো টেকসই উন্নয়নের ৯টি লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে আয়োজন করছে “ষষ্ঠ আরইউএসসি ন্যাশনাল সায়েন্স ফিয়েস্টা ২০২২”। দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আমাদের এবারের আয়োজন একটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করছে। আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন করার ক্ষেত্রে এবারের আয়োজন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হবে।’

বিজ্ঞান মেলা আয়োজনে সহায়তায় ছিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, সাপোর্টিং পার্টনার ইএমকে সেন্টার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং চিরকুট, অ্যাসোসিয়েট পার্টনার প্রথম আলো, পাবলিকেশন পার্টনার ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ম্যাগাজিন পার্টনার বিজ্ঞানচিন্তা ও মিডিয়া পার্টনার যমুনা টেলিভিশন।

অনুষ্ঠান শেষ হতেই চ্যাম্পিয়নরা ক্রেস্ট হাতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ভিড় করে। ছবি তুলছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের তিন শিক্ষার্থী আদনান জাওয়াদ, অনিক জাহান ও সাইফ মাহমুদ। তারা প্রোগ্রামিং কনটেস্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সেখানেই পাওয়া গেল ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাতকে। সে জানাল, তার প্রজেক্ট ‘ফায়ার ফাইটিং রোবট’ স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার রোবট ফায়ার সার্ভিসের লোক আসার আগেই আগুন নেভাবে। উদ্ধার কাজ করবে এবং ভেতরে অবস্থা কী, তা বাইরে জানিয়ে দেবে।