ছয় কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগির অভিযোগ 

কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে ৫ জুন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এলাকাবাসী।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ভাঙনরোধে তিস্তা নদীর তীর রক্ষার প্রায় ছয় কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। কুড়িগ্রাম পাউবো, ঠিকাদার ও স্থানীয় জাপার সংসদ সদস্যের প্রতিনিধির মধ্যে এই ভাগাভাগি হয়।

এদিকে কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ৫ জুন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর পক্ষে রেজাউল করিম, দুলাল মিয়া ও আমজাদ হোসেন এই চিঠি পাঠিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম পাউবো ও প্রকল্প এলাকায় টানানো বিলবোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষায় উপজেলার কারেন্ট বাজার এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। হাজার হাজার ঘরবাড়ি, জমি বিলীন হয়ে যায়। এ অবস্থায় ভাঙন ঠেকাতে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪২২ টাকা জরুরি বিশেষ বরাদ্দ দেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই টাকায় উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কারেন্ট বাজার এলাকা থেকে এক কিলোমিটার তিস্তা নদীর বাঁ তীর রক্ষার কথা। এ জন্য নদীর তীরে ২৫০ কেজির ধারণক্ষমতার ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ এবং ৭৫ কেজি ওজনের স্যান্ড (বালু) সিমেন্ট গানি ব্যাগ ৮১ হাজার ৭৪৬টি স্থাপন করার কথা। 

কাজটি গাইবান্ধা জেলার মধ্যে। কিন্তু কুড়িগ্রামসংলগ্ন হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০২২ সালের ২৪ মে এ কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ পর্যন্ত ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান কাজটির দায়িত্ব পান। 

প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, দরপত্র অনুযায়ী, ৭৫ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্যান্ড (বালু) সিমেন্ট গানি ব্যাগের বদলে ৩০ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চালের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্টের ভাগ কম। ইতিমধ্যে অধিকাংশ ব্যাগ ছিঁড়ে–ফেটে গেছে। এসব ব্যাগের বেশিরভাগ পচা। মবিল ও ময়লাযুক্ত। বস্তায় সিমেন্ট মিশ্রিত বালু থাকার নির্দেশনা রয়েছে। বাস্তবে ছেড়া ও ফেটে যাওয়া ব্যাগে শুধু বালুর অস্তিত্ব রয়েছে। 

একই ভাবে ২৫০ কেজির ধারণক্ষমতার ৭৫ হাজার জিও ব্যাগের বদলে আনুমানিক ৫২ হাজার বস্তা ফেলেই কাজ শেষ করা হয়েছে। জিও ব্যাগ নির্ধারিত মাপের বালু ভরানোর কথা। সেখানে বালুর পরিবর্তে কাদা ও কাদা মিশ্রিত বালু ভরা হয়েছে। অনেক বস্তা এখনই ফেটে গেছে। টাস্কফোর্সের বাতিল করা বস্তাও হিসাবের খাতায় তুলে ডাম্পিং করা হয়েছে। 

চিঠিতে বলা হয়, রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনিসহ কাজটি ভাগাভাগি হয় কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন, তাঁদের ব্যবসায়িক অংশীদার চিলমারীর দুই ব্যক্তি ও স্থানীয় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রতিনিধি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের মধ্যে। আবেদনকারীদের অন্যতম রেজাউল করিম সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কাজে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওযার দাবি জানান। 

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কারেন্ট বাজার এলাকায় তিস্তা নদীতে বিস্তীর্ণ চর। নদীর তীরের জমিঘেঁষে কিছু জায়গায় স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ। কিছু চটের (চালের ব্যাগ) ব্যাগ ফেটে গেছে। তাতে সিমেন্টের মিশ্রণ নেই বললেই চলে। কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ। সেগুলোর বেশকিছু ফেটে গেছে। তবে স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগই বেশি। জিও ব্যাগ নিচে বসানো হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, উভয় ব্যাগে বালু ও সিমেন্টের ভাগ কম। বর্ষা এলেই ভেসে যাবে। 

এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তাও দেওয়া হয়। 

সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ঠিকাদারের পক্ষে অর্ধেক অংশ সাব-কন্ট্র্যাক্ট এ কাজ করেছি। দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ হয়েছে। ঢাকা থেকে টাস্কফোর্স কমিটিও কাজ দেখে গেছে।’ তবে সংসদ সদস্য মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয়। কাজটি করছে একটি কোম্পানি। সাব-কন্ট্র্যাক্টকে লোকাল লোকজন করছে। আমার প্রতিনিধি হিসেবে মিজানুর কাজটি দেখাশোনা করছে।’ 

কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মুঠোফোন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাজ করব কেন? ঠিকাদারের কাজ ঠিকাদার নিজেই করেছেন। দ্রুত কাজসম্পন্ন করতে ঠিকাদার দুই তিনটি গ্রুপকে দিয়ে কাজ করেছেন। যেসব বস্তা খারাপ ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া টাস্কফোর্স কমিটি তদন্ত ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছে।’ তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত পুরো বিল দেওয়া হয়নি। যাচাই-বাছাইয়ের পর কাজ সঠিক পেলে পুরো বিল দেওয়া হবে।