এবার মোহনগঞ্জে ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষাসনদ পোড়ালেন যুবক

নিজের সব একাডেমিক সনদ পুড়িয়ে ফেলেছেন ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুস সালাম
ছবি: সংগৃহীত

এবার নেত্রকোনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নিজের সব একাডেমিক সনদ পুড়িয়ে ফেলেছেন ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুস সালাম (৩৪)। সরকারি চাকরির জন্য অনেক আবেদন করেও চাকরি পাননি তিনি। এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ। তাই তাঁর সব একাডেমিক সনদপত্র পুড়িয়ে ফেলেছেন তিনি।

সালামের বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের দেওথান এলাকায়। তিনি ওই এলাকার শামছুর রহমানের ছেলে। শহরের স্টেশন রোডে ‘কুটুমবাড়ি’ নামের তাঁর একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাকরি না পেয়ে তিনি রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করেন।

মোহনগঞ্জ পৌরশহরে তাঁর রেস্টুরেন্টের ভেতরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে সালাম তাঁর সার্টিফিকেটগুলো পোড়ান। পরে সেই সার্টিফিকেট পোড়ানো ছবি ও ভিডিও নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই তাঁর পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে সরকারি ইডেন কলেজের এক ছাত্রী তাঁর সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার পর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে চাকরির সুযোগ মেলে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় সালামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ২০০৬ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

পড়াশোনা শেষে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য একাধিকবার আবেদন করেও চাকরি মেলেনি তাঁর। চাকরির বয়স শেষে হতাশ হয়ে নিজের শহরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সালাম বলেন, ‘স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। রেজাল্টও ভালো। কিন্তু অনেক আবেদন করেও চাকরি হয়নি। অথচ অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরাও লবিং–তদবিরের মাধ্যমে, ঘুষের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে।’

সালাম আরও বলেন, ‘বয়স চলে যাওয়ায় এখন সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতেই আর আবেদনের সময় নেই। অকেজো এই সার্টিফিকেট তাই পুড়িয়ে দিলাম। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানাই। আওয়ামী পরিবারের সন্তান হয়ে শুরু থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। গ্রুপিং রাজনীতি চাকরি পাওয়ার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।’

বয়সসীমা সবার জন্য না বাড়িয়ে সার্টিফিকেট পোড়ানোর কারণে ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তাকে চাকরি দেওয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে সালাম বলেন, ‘এটা মন্ত্রী মহোদয় ঠিক করেননি। একজনের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না। সবার জন্য চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো দরকার। তাহলে সবাই এই সুযোগটা পাবে।’

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘এভাবে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। পড়াশোনা আসলে চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য। এ জ্ঞান জীবনের সব ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। সবার তো চাকরি হয় না। তাই চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে এই হতাশাগুলো আর থাকবে না।’