নদীর ওপর ৩৬ কোটি টাকার ৪ সেতু, ওঠার কোনো পথ নেই

ফেনীর দাগনভূঞার সিলোনিয়ায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির সংযোগ সড়ক নেই। ভূমি থেকে ২০ ফুট উঁচু এই সেতু কোনো কাজেই আসছে নাছবি : প্রথম আলো

ফেনীতে সংযোগ সড়ক ছাড়াই নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে চারটি সেতু। জেলার তিনটি উপজেলায় চারটি নদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে এসব সেতু নির্মিত হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও জমি অধিগ্রহণ–সংক্রান্ত জটিলতায় তৈরি হয়নি সংযোগ সড়ক।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনী জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলার দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। এর মধ্যে ডাকাতিয়া এবং পাহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক ট্রেডার্স এবং ছোট ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ করে মেসার্স ছালেহ আহমদ, মুহুরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ করে মেসার্স গ্রিনল্যান্ড সালেহ জেবি।

নির্মিত সেতুগুলোর বর্তমান অবস্থা

ডাকাতিয়া নদীর ওপর দাগনভূঞার সিলোনিয়ায় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি। তিন বছর পর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। সেতুটি নির্মাণের দেড় বছর অতিবাহিত হলেও সংযোগ সড়ক এখনো না থাকায় চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।

ছোট ফেনী নদীর ওপর দাগনভূঞার মাতুভূঞায় ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি। পাঁচ মাস পর একই বছরের ৩০ মে কাজটি স্থগিত করা হয়। তত দিনে মূল সেতু নির্মাণকাজ হয়ে যায়।

মুহুরী নদীর ওপর ছাগলনাইয়ার পাঠাননগরে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি। সাড়ে চার বছর পর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৫ জুন। সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক এখনো না থাকায় চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।

কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর সোনাগাজীর নবাবপুরে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। তিন বছর পর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর। সেতুটি নির্মাণের দেড় বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় এখনো চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।

ফেনীর দাগনভূঞার মাতুভূঞায় ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটিরও নেই কোনো সংযোগ সড়ক
ছবি: প্রথম আলো

ঠিকাদারেরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা পাননি তাঁরা। সে কারণে সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা যায়নি।

সংযোগ সড়কবিহীন এসব সেতুর একটি রয়েছে দাগনভূঞার সিলোনিয়ার ডাকাতিয়া নদীর ওপর। সেতুটি ভূমি থেকে প্রায় ২০ ফুট ওপরে। এ নিয়ে এলাকার মানুষজন বেশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের কথা, এমন দায়সারা সেতু নির্মাণের পেছনে দুর্নীতি রয়েছে। এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুহাম্মদ শরিফুল আলমও একই কথা বললেন। সম্প্রতি ওই এলাকায় গেছে তিনি বলেন, নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য একটি সেতুর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নির্মিত সেতুটি নদী থেকে ২০ ফুট ওপরে। এ কারণে হেঁটেও সেতুটি পার হওয়া সম্ভব নয়। প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির কারণেই এভাবে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ সড়কবিহীন সেতুগুলো নির্মাণে অদূরদর্শিতার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তাঁর দায়িত্ব পালনের আগে যাঁরা সেতুগুলো নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁদের বিষয়গুলো আরও খেয়াল করার দরকার ছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির সংযোগ সড়কের জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। একটি অধিগ্রহণ ছাড়া করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর জমি অধিগ্রহণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সংযোগ সড়কের জটিলতা আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিরসন হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নির্মিত সেতুগুলো এলজিইডির। যেহেতু সেতুর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে রয়েছে, অবশ্যই ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে প্রকল্প চলাকালীন যোগাযোগ করার প্রয়োজন ছিল। তবে ইতিমধ্যে তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিষয়টি তদারকি করছেন। সংযোগ সড়কের জন্য চাহিদামাফিক ভূমি অধিগ্রহণ ও জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দ্রুত সেতুগুলো চলাচলের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’