সংযোগ সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়নি। তাই মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হচ্ছে না। গত সোমবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার ভেড়ামারা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দুই পাশে সংযোগ সড়কে বালু ফেলা হয়েছে। সেতুসংলগ্ন সংযোগ সড়কের তীরে সিসি ব্লক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়কটি পাকাকরণের কাজ থেমে আছে। ফলে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাচ্ছে না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ঘাঘট নদের ওপর ভেড়ামারা এলাকায় সেতুটির অবস্থান। সেতুটি চালু না হওয়ায় হাজারো মানুষকে তিন কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে।

সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ভেড়ামারা এলাকায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ঘাঘট নদের ওপর ৮১ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট সেতুটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি।

সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এটি চলাচলের জন্য দ্রুত খুলে দেওয়া হবে।
ছাবিউল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডির গাইবান্ধা কার্যালয়

গত সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, মূল সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। দুই পাশে উত্তর-দক্ষিণে বালু দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগ সড়কের তীরে সিসি ব্লক দেওয়া হয়েছে। সংযোগ সড়কের অংশে বালুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেকে অটোরিকশা, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। অনেকে এসব যানবাহন ঠেলে পারাপার করছেন। সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।

সেতুর পাশে খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ইব্রাহিম খলিলের বাড়ি। তিনি বলেন, মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ছে প্রায় তিন মাস আগে। কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। দুই পাশে সংযোগ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার পাকাকরণ করলেই সেতুটি চালু করা যায়। কিন্তু তা করতে দেরি করা হচ্ছে। ফলে এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সেতুটি চালু হলে সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ভেড়ামারা, কিশামত বালুয়া, মোল্লাবাজার ও কাজীর বাড়ি গ্রামের মানুষ বেশি উপকৃত হবে।

কিশামত বালুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়া বলেন, সেতুটির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়ক পাকা না করায় এটি চালু করা যাচ্ছে না। চারটি গ্রামের মানুষকে তিন কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে।

খোলাহাটিসংলগ্ন সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুটি চালু হলে শুধু চারটি গ্রামের মানুষের পাশাপাশি সদর উপজেলার উত্তরের চারটি ইউনিয়নবাসী উপকৃত হবে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে খোলাহাটি, কুপতলা, লক্ষ্মীপুর ও মালিবাড়ি। এ ছাড়া সদর উপজেলার উত্তরে অবস্থিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মানুষের জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। সদরের চারটি ইউনিয়নের পাশাপাশি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়ক ধরে জেলা শহরে আসে। এতে জেলা শহরের ব্রিজরোডে দিন–রাত যানজট লেগে থাকে। এ বাস্তবতায় সেতুটি চালু হলে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে। এ দিক দিয়েও এসব এলাকার মানুষ জেলা শহরে প্রবেশ করতে পারবে।

নথিপত্রে সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড। তবে কাজটি করছেন গাইবান্ধার ঠিকাদার তারেক চৌধুরী। নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু এলজিইডি সড়কটি আরও উঁচু করতে বলেছে। তাই সড়কটি উঁচু করার পর পাকা করা হবে। কাজ শুরু হয়েছে।

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। সেতুটি চলাচলের জন্য দ্রুত খুলে দেওয়া হবে।