বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে ডাকাতির সময় নিখোঁজ ৯ জেলের সন্ধান মেলেনি
বঙ্গোপসাগরে সশস্ত্র জলদস্যুদের হামলায় জীবন বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপ দেওয়া বরগুনার ৯ জেলের সন্ধান এখনো মেলেনি। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ডাকাতির সময় জেলেরা সাগরে ঝাঁপ দেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আজ রোববার বিকেল পর্যন্ত তাঁদের কোনো হদিস মেলেনি। সন্ধান না পাওয়ায় এসব জেলের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন।
নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে র্যাব-৮ ও কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশনের সদস্যরা যৌথভাবে কাজ শুরু করেছেন। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার ও এফবি ভাই ভাই নামের ট্রলারটিতে ডাকাতির সময় আহত অপর ৯ জেলের সঙ্গে আজ কথা বলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন কাইউম জোমাদ্দার (৩৫), ইয়াছিন জোমাদ্দার (৩২), আবুল কালাম (৫৮), শফিকুল মাঝি (৩৫), খাইরুল ইসলাম (৪০), আবদুল আলীম (৫৫), ফরিদ (৩৮), আবদুল হাই (৪০)। অপর এক জেলের নাম পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের চরগাছিয়া এলাকায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, র্যাব ও কোস্টগার্ড জেলেদের সঙ্গে কথা বলে নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে সাগরে অভিযানে নেমেছে। একই সঙ্গে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরে আসা আহত ৯ জেলেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
র্যাব–৮–এর পটুয়াখালীর কোম্পানি অধিনায়ক ও সহকারী পুলিশ সুপার তুহিন রেজা বলেন, ‘কোস্টগার্ডের সঙ্গে আমাদের একটি দল সাগরে উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। অপর একটি দল ডাকাতদের ধরতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেও কাজ করছে।’
জেলেদের স্বজন ও ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা জানান, বরগুনা সদরের নলী বন্দরের চরগাছিয়া এলাকার মনির হোসেনের মালিকানাধীন এফবি ভাই ভাই নামের ট্রলারটি শুক্রবার দুপুরে পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্যবন্দর থেকে বরফ, জ্বালানি ও বাজার–সদাই নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ট্রলারটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ২০০ কিলোমিটার সাগরের গভীরে পৌঁছালে রাত দেড়টার দিকে অন্য একটি ট্রলার নিয়ে জলদস্যুরা ওই ট্রলারে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দস্যু দলের সদস্যরা ট্রলারের সব জেলেকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে দস্যুরা জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফাঁকা গুলি করলে আতঙ্কে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ডাকাতেরা ট্রলারটিতে লুটপাটের পরে মেশিনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেলে ট্রলারটি সাগরে ভাসতে থাকে। পরে আজ সকালে অন্য জেলেরা অপর একটি ট্রলারের সাহায্যে তাঁদের তীরে ফিরিয়ে আনেন। ডাকাতেরা ১৭–১৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলার নিজামপুর কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার রাজিউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাতির ঘটনায় জেলে নিখোঁজের বিষয়টি জানার পরপরই তাঁদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে কোস্টগার্ড।