আড়াইহাজারে মা ও মেয়েকে অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলার আসামি কুমিল্লায় গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মা ও মেয়েকে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনার অভিযোগে হওয়া মামলার আসামি খোকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ের সামনে থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মা ও মেয়েকে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি খোকন মিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার দিবাগত আড়াইটার দিকে কুমিল্লার তিতাস থানার বাতাকান্দি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার খোকন মিয়া আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার গায়েনপাড়া এলাকার মৃত আনসার আলীর ছেলে। তাঁকে তাঁর স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (২২) ও মেয়ে মারিয়াকে (৬) অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১১-এর উপ-অধিনায়ক মেজর সানরিয়া চৌধুরী এ তথ্য জানায়। র‍্যাবের ওই ব্যাটালিয়নের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা সানরিয়া চৌধুরী বলেন, গত ২৩ জুন আড়াইহাজারে ঘুমন্ত মোর্শেদা বেগম ও তাঁর ছয় বছর বয়সী মেয়েশিশুর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা হওয়া মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে তাঁর প্রথম স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি তাঁর মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পাঁচ মাস আগে মোর্শেদাকে বিয়ে করেন খোকন মিয়া। এটি খোকনের তৃতীয় বিয়ে।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, বিয়ের পর থেকে শিশু মারিয়াকে তার নানির বাড়িতে রেখে আসার জন্য চাপ দেন মোর্শেদার স্বামী খোকন। এতে রাজি না হওয়ায় মোর্শেদার স্বামী তাঁকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন। এর জেরে তিন মাস আগে মোর্শেদাকে মারধর করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় খোকন। মোর্শেদা তাঁর মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। ২৩ জুন রাত দুইটার দিকে খোকনসহ অজ্ঞাতনামা তিন–চারজন মোর্শেদা ও মারিয়ার শরীরে ঘরের জানালা দিয়ে সিরিঞ্জ ব্যবহার করে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। এতে মোর্শেদার পা ও তাঁর মেয়ে মারিয়ার মুখ ঝলসে যায়। এ সময় তাঁদের চিৎকারে পরিবারে লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের উদ্ধার করে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয় গেলে চিকিৎসকেরা তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা সানরিয়া চৌধুরী মা-মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে তাঁরা রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ৪ জুলাই মোর্শেদা বেগমের মা বাদী হয়ে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। এ ঘটনায় র‌্যাব-১১ ছায়া তদন্ত শুরু করে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার বাতাকান্দি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিকে আড়াইহাজার থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর সানরিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাবকে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গত বুধবার বিকেলে  নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথম আলো ট্রাষ্টের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে মোরশেদা বেগম ও শিশু মেয়ের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত আসামি খোকনের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সুধী সমাজ ও নারায়ণগঞ্জ প্রথম আলো বন্ধু সভা।