বেসিনে নেই পানি–সাবান, ছয় লাখ টাকা গচ্চা

বেসিনের রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে মহামারির প্রকোপ কমার দুই বছরের মধ্যেই এসব বেসিন নষ্ট হয়ে গেছে।

মাদারীপুরে সাধারণ মানুষের হাত ধোয়ার জন্য বসানো বেসিনগুলো আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। গত বৃহস্পতিবার শহরের শকুনি লেকের দক্ষিণপাড়েছবি: প্রথম আলো

করোনা মহামারি চলাকালে সাধারণ মানুষের হাত ধোয়ার জন্য মাদারীপুরের বিভিন্ন হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্থানে বেসিন বসানোর উদ্যোগ নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। বেসিনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তবে এসব বেসিন এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। বেশির ভাগ বেসিনের কল চুরি হয়ে গেছে। অনেকে আবর্জনা ফেলে রেখেছে বেসিনের ভেতরে বা আশপাশে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, মহামারি চলাকালে তড়িঘড়ি করে এসব বেসিন বসানো হয়। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর সাবান-পানিও সরবরাহ করা হয়নি। ফলে মহামারির প্রকোপ কমার কিছুদিনের মধ্যেই এসব বেসিন কার্যকারিতা হারিয়েছে।

আর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বেসিনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের ছিল না। যেসব প্রতিষ্ঠান বা হাটবাজারে এগুলো দেওয়া হয়, তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু কেউ নজর না দেওয়ায় কোনো সুফল মেলেনি।

জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, বেসিন অচল হওয়ার কথা নয়। কী কারণে বেসিনগুলো অকেজো হয়ে আছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত এগুলো সচল করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার সময় সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া দরকার ছিল। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সে সময় দেশজুড়ে স্থায়ীভাবে জেলা শহর ও উপজেলায় বেসিন বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের জন্য ২০২০ সালের জুনে জেলা প্রশাসন থেকে সদর, কালকিনি, ডাসার, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রতিষ্ঠানের সামনে খোলা স্থানে ২০টি বেসিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬ লাখ ৩ হাজার টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের সামনে বসানো বেসিনটির অবকাঠামো থাকলেও নেই কল বা পানির ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে বেসিনটি। সেখানে আবর্জনা পড়ে আছে। একই অবস্থা মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের ভেতরে বসানো বেসিনটির। পানি সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে আসা প্রতিদিন শত শত রোগী ও স্বজনদের কোনো কাজেই আসছে না বেসিনটি।

জেলা হাসপাতালে আসা কলেজছাত্র আবদুল হক বলেন, ‘কোভিডের সময় থেকে এখানে বেসিন দেখছি। দুই-একবার হাত ধুতে পারলেও এখন আর হাত ধোয়ার অবস্থা নেই। কলে পানি নেই। ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে।’

এ ছাড়া পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে, ইটেরপুল বাসস্ট্যান্ড, পৌর বাজার, উপজেলা পরিষদের ভেতর, শকুনি লেকের পশ্চিম পাড়ে, রফিক সুপার মার্কেটের সামনে বসানো অধিকাংশ বেসিনের একই দশা। আবার কোথায় উধাও হয়ে গেছে কলসহ পুরো বেসিনই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বসানো বেসিনটির কলকবজা সব উধাও হয়ে গেছে।

লেকপাড় এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘লেকের দক্ষিণ পাড়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামনের বেসিনে পানির কল নেই। নিচে ময়লার ভাগাড়। আমাদের জন্য বসানো বেসিনগুলো শুধু সরকারের টাকা অপচয় ছাড়া কিছু নয়। কোনো উপকারে আসেনি।’

নিজামউদ্দিন নামের এক পথচারী বলেন, উন্মুক্ত স্থানে থাকা এসব বেসিন সচল থাকলে সবার উপকার হতো। সাধারণ মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন হতো। সবাই সচেতনও থাকত।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেসিন তৈরির পর কিছুদিন সেসব বেসিনে সাবান ও পানি সরবরাহ করা হয়। পরে আর সেখানে পানি সরবরাহ করা যায়নি। মূলত পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সংকটের কারণে পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে যায়। যদিও এসব বেসিনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন হাটবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির। তারাও বিষয়টি নজর দেয়নি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার শামসুল ইসলাম বলেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল শুধু বেসিন নির্মাণ করা। দেখভালের দায়িত্ব নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের। এরপরও বেসিনগুলো কোথাও অকেজো থাকলে জনস্বার্থ প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানালে তা সংস্কার বা সচলে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান বলেন, করোনাকালে নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা ও হাত ধোয়ার যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল, এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহ ও সাবানের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই এসব বেসিন বসিয়েছিল। যে কারণে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হলেও দুই-এক মাসের বেশি এসব কাজে আসেনি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ভুল নীতির কারণেই উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।