এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নাফিসও অবাক

নাফিস উল হক
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুর সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন নাফিস উল হক ওরফে সিফাত। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। তবে এর আগেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) স্নাতকে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। গত বুধবার এমআইটি থেকে পাঠানো এক ই–মেইলে নাফিসের ভর্তির সুযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় মা–বাবার সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকেন নাফিস। মা–বাবা দুজনেই শিক্ষকতা করেন। নাফিসের বাবা মো. নাসির উদ্দিন মতলব রয়মনেনসা মহিলা কলেজের শিক্ষক। আর মা কামরুন নাহার হাজীগঞ্জ মডেল কলেজে শিক্ষকতা করেন। নাফিসের গ্রামের বাড়ি মতলব দক্ষিণের নওগাঁ গ্রামে।

ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন নাফিস। তাই খুব ছোট বয়স থেকেই গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাফিস ছিলেন নিয়মিত মুখ। আছে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। এর আগে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসিতে পাস করেন তিনি। তবে এমআইটির মতো কোনো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন, নাফিস সেটা কখনো ভাবেননি।

নাফিস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করার। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি সব সময় বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতাম। এ ছাড়া আমি সব সময় বিখ্যাত ব্যক্তি ও গুণি স্যারদের অনুসরণ করতাম। কিন্তু আমি কখনোই নির্দিষ্ট করে এমআইটির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ, অনেক ট্যালেন্টেড (মেধাবী) না হলে এমআইটিতে সুযোগ পাওয়া কঠিন। আমি এতটা কনফিডেন্টও (আত্মবিশ্বাসী) ছিলাম না। তারপরও আমি ট্রাই (চেষ্টা) করেছি, দেখি কী হয়। শেষ পর্যন্ত দেখলাম, আমি সত্যি সুযোগ পেয়েছি। এতে মনে করি, আমি অনেক লাকি।’

চাঁদপুর সরকারি কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাফিসকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আজ শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

নিজের এই সাফল্যে নাফিস নিজেও অবাক। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পাব। এ জন্য আমি বলব, আমি অনেক লাকি পারসন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাতেগোনা এক বা দুজন এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পান। এবার আমি সুযোগটি পেয়েছি। এতে আমি অবাক হয়েছি, আনন্দিতও হয়েছি। এ জন্য আমার মা–বাবা, আমার শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে কৃতজ্ঞ।’

নাফিস সব সময়ই তাঁর প্রিয় শিক্ষকদের অনুসরণ করতেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ নাফিসকে এত দূর নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তিনি। নাফিস বলেন, ‘আমার লাইফে কিছু মানুষের এবং স্যারদের অনেক কন্ট্রিবিউট বা অবদান আছে। তার মধ্যে বলব—মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার, কায়কোবাদ স্যার, সোহেল স্যার। তাঁদের সান্নিধ্যে থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি। আমি সব সময় চেয়েছিলাম, স্যারদের মতো হই। কারণ, ছোটবেলা থেকে আমি বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশ নিতাম। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্সে (আইওআই) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছিলাম।’

সংবর্ধনা পেলেন নাফিস

আজ শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন ও ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর সরকারি কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাফিসকে ফুল দিয়ে বরণ নেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ সময় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নাফিসকে সংবর্ধনা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘নাফিস শুধু চাঁদপুরের নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। কারণ, নাফিস এ দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমি সব সময় তার পাশে থাকব।’

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস বলেন, ‘আমার কলেজের নাফিস এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এ জন্য তার (নাফিজ) চেষ্টা ছিল। কারণ, সে সব সময় বিজ্ঞানবিষয়ক পড়াশোনা বা গবেষণা নিয়ে আগ্রহী। সেটারই প্রতিফলনে এই সাফল্য এসেছে। শুধু আমার কলেজে নয়, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ রকম অনেক নাফিস আছে। আমি আশা করব, ঠিকমতো অনুসন্ধান করলে আমরা অনেক নাফিসকে বের করে আনতে পারব।’