হবিগঞ্জে ৪ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ, ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ

হবিগঞ্জে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অটোরিকশাচালকদের। মঙ্গলবার শহরের এম হাই ফিলিং স্টেশনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জের আটটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মধ্যে চারটি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)। এতে বাকি চারটি ফিলিং স্টেশনে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিতে চালকদের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। এতে চালকদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় শহর ও শহরতলির বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকেরা। কোথাও কোথাও ভাড়া দ্বিগুণ করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেজিটিডিএসএল, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর জন্য গ্যাসের একটি মাসিক বরাদ্দ থাকে। সেই অনুযায়ী ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ গ্যাস বিক্রি করে। এত দিন কড়াকড়ি না থাকায় কোনো কোনো স্টেশন বরাদ্দের চেয়ে বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে। কিন্তু সরকার এখন গ্যাস সাশ্রয়ের নির্দেশ দেওয়ায় বরাদ্দের বাইরে গ্যাস বিক্রির সুযোগ নেই। এ অবস্থায় মাসিক বরাদ্দের গ্যাস নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় চারটি স্টেশনে সোমবার থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে জেজিটিডিএসএল। ওই স্টেশনগুলো হলো মাধবপুর উপজেলার আল আমিন ফিলিং স্টেশন, সেমকো ফিলিং স্টেশন এবং শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জিএস ব্রাদার্স ফিলিং স্টেশন ও শায়েস্তাগঞ্জ সিএনজি স্টেশন।

এদিকে একসঙ্গে চারটি গ্যাস ফিলিং স্টেশন বন্ধ হওয়ায় জেলার অন্যান্য স্টেশনে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। স্টেশনগুলোয় গাড়ির সারি দীর্ঘ হচ্ছে। চালকেরা বলছেন, চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে থেকে গ্যাস নিতে হচ্ছে তাঁদের। এতে তাঁদের কর্মঘণ্টার বড় একটি অংশ নষ্ট হচ্ছে।

শহরের আবদুল হাই ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে আসা অটোরিকশার চালক রুবেল আহমদ বলেন, তিনি ভোর চারটার দিকে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নিতে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি গ্যাস পেয়েছেন। একই কথা বলেন আরেক চালক সিরাজ মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আটটির মধ্যে একসঙ্গে চারটি ফিলিং স্টেশন বন্ধ হওয়ায় অন্যান্য ফিলিং স্টেশনে চাপ বেড়েছে। এ দুর্ভোগের শেষ কোথায় কেউ জানে না।

ফিলিং স্টেশনে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকেরা। কোথাও কোথাও ভাড়া দ্বিগুণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন পর্যন্ত ২৫ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে শাকির মোহাম্মদ এলাকা পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২০ টাকা, আজ থেকে তা ৩০ টাকা করা হয়েছে। হবিগঞ্জ শহর থেকে মিরপুর পর্যন্ত ৩০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা করা হয়েছে। হবিগঞ্জ বানিয়াচং সড়কে ৪০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন চালকেরা। এভাবে জেলা সদর থেকে বিভিন্ন সড়কে অটোরিকশার ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকেরা।

অটোরিকশাচালক জুয়েল বলেন, আগে সারা দিনে ৮ থেকে ১০টি ট্রিপ দেওয়া যেত। কিন্তু গ্যাস–সংকটের কারণে এখন দুটির বেশি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ গাড়ির মালিককে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। এ জন্য বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে হচ্ছে।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. খালেদ গণি প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় আটটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে। এর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি গ্যাস বিক্রি করায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল থেকে চারটি স্টেশনে সাময়িক সময়ের জন্য সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।