সিলেটে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া ৪ নবজাতকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি

সিলেটে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার নবজাতক। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেছবি: সংগৃহীত

সিলেটে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার নবজাতকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ওজন কিছুটা কম হওয়ায় তাদের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছে। তাদের শারীরিক কোনো জটিলতা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আজ শনিবার রাতেই নবজাতকদের কেবিনে মায়ের কাছে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানা গেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে চার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ ফৌজিয়া বেগম। ফৌজিয়ার স্বামী রহুল আমিন সৌদিপ্রবাসী। তাঁদের সাড়ে তিন বছরের আরেকটি মেয়ে আছে।

হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান শাহানা ফেরদৌস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজিয়া বেগম প্রথম সন্তান হওয়ার পর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এতে বিলম্ব হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা ওষুধ খেয়েছিলেন। তিনি বলেন, একজন নারীর শরীর থেকে সাধারণত একসময়ে একটি ডিম্বাণু বের হয়। নারীর ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণুর মিলনের ফলে গর্ভধারণ হয়। একের অধিক ডিম্বাণুর সঙ্গে একের অধিক শুক্রাণুর মিলন হলে একাধিক শিশু একসঙ্গে বেড়ে ওঠে। এ জন্য যমজ শিশু জন্মায়। অনেক সময় একটি ডিম্বাণু থেকেও যমজ শিশুর জন্ম হতে পারে।

প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক খোদেজা বেগম বলেন, সাধারণত একজন মা গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন। এর আগে জন্ম নেওয়া শিশুকে প্রিম্যাচিউর বলা হয়। ফৌজিয়া বেগম ৩৬ সপ্তাহে প্রসবব্যথা অনুভব করেছিলেন। এরপর হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চার সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকগুলো কিছুটা প্রিম্যাচিউর থাকায় এনআইসিইউতে রাখতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দিকে চার নবজাতককে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। আজ সকাল থেকে সেটিরও প্রয়োজন পড়ছে না। আরও কিছুক্ষণ তত্ত্বাবধানে রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

শনিবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে নবজাতকদের বাবা রহুল আমিনকে পাওয়া যায়নি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এনআইসিইউতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, একসঙ্গে চার সন্তান জন্মের খবরে অনেকে তাঁকে ফোন দিচ্ছেন। এতে তিনি বিরক্ত। তিনি বলেন, স্ত্রী ও একসঙ্গে জন্মানো চার সন্তানকে নিয়ে তিনি চিন্তিত। তাঁদের দেখাশোনায় ব্যস্ত। এখনো সন্তানদের নাম রাখতে পারেননি।

রহুল আমিনের চাচাতো ভাই আতিকুল ইসলাম বলেন, রহুল আমিন ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। এক-দুই বছরে একবার দেশে আসা-যাওয়া করেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে দেশে এসেছেন। গর্ভে থাকতেই চার সন্তানের বিষয়টি জানতেন। এখন অনেকে ফোন করে দেখা করতে চাওয়ায় তিনি বিব্রত হচ্ছেন। তিনি বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর শুক্রবার ভাবিকে (ফৌজিয়া) কেবিনে দেওয়া হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জি এম মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ওজন কম। এ জন্য নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি হলে আদর্শ বলা হয়। নবজাতকগুলোর ওজন যথাক্রমে ১ দশমিক ৪, ১ দশমিক ৬, ১ দশমিক ৮ ও ২ দশমিক ১ কেজি। এরপরও তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো।