খাগড়াছড়িতে পাহাড় কেটে সড়কের রক্ষা দেয়ালের মাটি ভরাট

সড়কের রক্ষা দেয়ালের মাটি ভরাট করতে কাটা হয়েছে পাহাড়। গতকাল দুপুরে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ১৩ মাইল এলাকায়ছবি: সুপ্রিয় চাকমা।

রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস ঠেকাতে রক্ষাদেয়াল নির্মাণ করছে সড়ক বিভাগ। এখন ওই রক্ষাদেয়ালের ফাঁকা অংশ ভরাট করতে কাটা হচ্ছে পাহাড়। সড়কটির অন্তত সাতটি স্থানে এভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে। এর ফলে বর্ষায় এসব এলাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বগাছড়ি সেতু এলাকা, ঘিলাছড়ি বাজারের দুই স্থানে, রবারবাগান এলাকায় দুটি স্থানে ও খামারপাড়া এলাকায় একটি স্থানে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব পাহাড় কাটার মাটি দিয়ে রক্ষাদেয়ালের ফাঁকা স্থান ভরাট করা হচ্ছে।

পাহাড় কেটে রক্ষাদেয়াল ভরাট করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে পাহাড় কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার লোকজন। খননযন্ত্র দিয়ে গভীর রাতে পাহাড় কাটার কারণে প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, বগাছড়ি-নানিয়ারচর ও ঘাগড়া-বরইছড়ি-বান্দরবান সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর সড়ক সংস্কার ও রক্ষার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে নালাসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি দেয়াল নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের ২১ জুন কাজ শেষ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও কাজ শেষ করা যায়নি। এখন পর্যন্ত তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। উল্টো পাহাড়ধস ঠেকানোর জন্য পাহাড় কেটেই রক্ষাদেয়াল তৈরির কাজ চলছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খামারপাড়া, ঘিলাছড়ি বাজার ও রবারবাগান এলাকায় পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে রবারবাগান এলাকায় একটি উঁচু টিলা কেটে বড় মাঠ সৃষ্টি করা হয়েছে। পাহাড় কাটার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কিছু বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রবারবাগান এলাকার জরিনা চাকমা অভিযোগ করেন, ‘বগাছড়ির মো. সোহেল নামের এক ব্যক্তি গভীর রাতে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড় কাটার কারণে আমাদের বাগানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাধা দেওয়ায় উল্টো আমাদের নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমরা নাকি সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. সেলিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাহাড় কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি পাহাড় কাটার কাজ করি না। আমি গাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’

রক্ষাদেয়াল নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ঠিকাদার মো. আকাশ বলেন, ‘আমরা রক্ষাদেয়াল ভরাটে কোনো পাহাড় কাটছি না। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের সমতল জমি থেকে মাটি এনে দিচ্ছেন।’

পাহাড় কেটে রক্ষাদেয়াল ভরাট করার খবর শুনে ২২ জানুয়ারি কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাপছড়ি এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেন। নানিয়ারচরের ইউএনও পাহাড় কেটে রক্ষাদেয়াল ভরাটের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান।

নানিয়ারচরের ইউএনও মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বেশ কিছু স্থানে পাহাড় কেটে সড়কের রক্ষাদেয়াল ভরাটের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো হয়েছে। গভীর রাতে পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে নিরাপত্তার কারণে অভিযানে যাওয়া যাচ্ছে না। তবে পাহাড় কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।’

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানও কঠোর। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার সড়কের রক্ষাদেয়াল নির্মাণ করে বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু রক্ষাদেয়ালে মাটি ভরাটের বিষয়টি কীভাবে করবেন, তা আমাদের জানার কথা নয়।’