ভবনটি গণপূর্ত বিভাগ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৩ সালে। ঝুঁকি জেনেও ১০ বছর ধরে সেখানেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। গত ১২ এপ্রিল খুলনার কয়রায়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সহকারী জজ আদালত ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ঝুঁকি জেনেও ১০ বছর ধরে সেখানে চলছে আদালতের কার্যক্রম। বিকল্প জায়গা না থাকায় এভাবে বিচারিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে।

জানা গেছে, আদালতে নিরাপত্তা জোরদারে প্রধান বিচারপতির ১১ দফা নির্দেশনা কয়রার জরাজীর্ণ আদালত ভবনে বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিষয়টি কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আজহারুল ইসলাম গত ২৭ মার্চ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

কয়রা আদালতের পেশকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে অনেক আগে। প্রতিবছর তা মেরামতের নামে ঢেকে দেওয়া হয়। কিন্তু ছয় মাস পর একই অবস্থা দেখা যায়। মাঝেমধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে দলিল ও কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। চলতি বছর আবারও ভবনের দেয়াল ও ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ভবনে এখন কেউ নিরাপদ নয়। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

দেলোয়ার হোসেন জানান, কিছুদিন আগে আদালতের হাজতখানার জানালা ভেঙে আসামি পালিয়ে যাচ্ছিল। তাত্ক্ষণিকভাবে পুলিশ আসামিকে আবার আটক করতে সক্ষম হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ১ একর ৬১ শতাংশ জমির ওপর আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটিতে ১৫টি কক্ষ রয়েছে। এর পূর্ব পাশে সহকারী জজ আদালত এবং পশ্চিম পাশে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম চলছে। দুটি আদালতে প্রতিদিন দেড়–দুই শ মামলার হাজিরা ও শুনানির দিন ধার্য থাকে। ফলে সেখানে প্রতিদিন ৭০০–৮০০ লোকের সমাগম ঘটে। কমবেশি সবাই জানেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত। তাই যতক্ষণ অবস্থান করেন, ততক্ষণ ভয় তাড়া করে তাঁদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের প্রতিটি কক্ষের ছাদ এবং দেয়ালে বড় বড় ফাটল রয়েছে। কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে বেরিয়ে আছে ইট, খোয়া ও রড। প্রতিবছর জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবনের খসে পড়া ধুলাবালুতে ঢেকে আছে আদালতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি। প্রতিটি কক্ষের ছাদ ও দরজা-জানালা বেহাল। হাজতখানার দরজা-জানালা ভাঙা, শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। যথোপযুক্ত স্থান না থাকায় মামলার বিপুল নথি স্তূপ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন কক্ষের মেঝেতে।

স্থানীয় কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একটি মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ নিতে কয়রা আদালতের জিআরওর (সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা) রুমে গিয়েছিলাম। ওই সময়ে হঠাৎ দরজার ওপর থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পাই।’

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির স্থায়িত্ব ও বাহ্যিক অবস্থা বিবেচনা করে ২০১৩ সালে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সে সময় ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন একটি আদালত ভবন নির্মাণের জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন পার হলেও ফিরতি কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে কয়রা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কমলেশ কুমার সানা বলেন, ৩৯ বছরের অধিক পুরোনো কয়রা আদালত ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ভবনের ছাদ ধসে শরীরে পড়ে। সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে হয়। তা ছাড়া বর্ষার দিনে এজলাসের ভেতরে পানি পড়ে। দ্রুত ভবনটি নির্মাণের বিকল্প নেই। ইতিপূর্বে একাধিকবার বিচারক ও আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়সহ প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে আদালতের জিআরও হুমায়ুন কবির জানান, সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়  রয়েছে আদালত ভবনের পুলিশ ব্যারাক ও হাজতখানা। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। হাজতখানায় আসামি রেখে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাঁদের।

গণপূর্ণ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি খুলনার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছি। কয়রা আদালতের নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’