গাজীপুরের চন্দ্রায় বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে ঘরমুখী মানুষ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রীদের অপেক্ষা। আজ সকালে সাড়ে ৯ টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

কাল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেষ মুহূর্তে পরিবার-পরিজন নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছেন মানুষ। তবে আজ বুধবার ভোররাত থেকে টানা বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখী শত শত মানুষ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেউ বাসে, কেউবা গরুবাহী ফিরতি ট্রাকে, কেউবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও পিকআপে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শুরু হয় যানজট। রাতভর থেমে থেমে চলে যানবাহন। সকাল থেকে গাজীপুর অংশে যানজট না থাকলেও মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের চাপ রয়েছে আগের মতোই।

আজ সকাল সাড়ে নয়টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তাঁরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। কেউ ছাতা নিয়ে, কেউ মাথায় পলিথিন পেঁচিয়ে, কেউবা আবার বৃষ্টিতে ভিজেই রওনা হয়েছেন। চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানজট না থাকলেও পরিবহন ও যাত্রীদের চাপে জটলা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মধ্যে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন গাড়ির জন্য।

গতকাল যে যানজট ছিল, সেটি এখন নেই। তবে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ঘরমুখী মানুষের জন্য ঈদযাত্রা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

চন্দ্রা ত্রিমোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শরিফা বেগম, শিশু মিলন ও তার মা মরিয়ম বেগম। মরিয়ম বেগম জানান, গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গতকাল দুপুরে বেতন-বোনাস পেয়েছেন। তাই চিন্তা করেছেন আজ সকালে বাড়িতে যাবেন ঈদ করতে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজশাহী যাব, বাসের টিকিট কেটেছি, কিন্তু বাসের দেখা মেলেনি। বারবার কাউন্টারে গিয়ে কথা বললে তারা বলে, বাস ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। খালি বলে অপেক্ষা করতে। এ অপেক্ষা কখন শেষ হবে, সেটা জানি না। টানা ৩ ঘণ্টা বসে আছি। টিকিট পেতে অনেক ভোগান্তি পেতে হয়েছে। তবু বাড়ি ফিরতে হবে।’

গাড়ি না পেয়ে ট্রাক–পিকআপে উঠে ভিজে ভিজেই রওনা হন অনেকে। আজ সকালে গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

একটি পিকআপের পেছনে ছাতার নিচে বসে ছিলেন সিরাজগঞ্জের আবু তালেব মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম সকালে আরামে বাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আরও বেশি বিপদে পড়েছি। গাড়ি না পেয়ে পিকআপে উঠে ভিজে ভিজেই রওনা হয়েছি।’

ওই পিকআপে আবু তালেবের মতো আরও ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী ছিলেন। জসিম উদ্দীন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘বাড়িতে যেতে তো আনন্দই হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও মনে কষ্ট নেই। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব—এটাই বড় কথা।’
বৃষ্টিতে সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে শিশুদের। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে তারা ভিজে ভিজে যাচ্ছে গ্রামে। মায়েরা কোলের শিশুকে নিয়েও এই বৃষ্টির মধ্যে বের হয়েছেন। ট্রাকের ওপর ত্রিপল টাঙিয়ে রওনা হয়েছেন অনেকেই।

রাজশাহীর তানোর যাচ্ছেন হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গতকাল কারখানা ছুটি হয়েছে। যানজটের কারণে গতকাল বের হইনি। ভেবেছিলাম ফজরের পর বের হব, কিন্তু বৃষ্টির কারণে বের হওয়া যায়নি। বৃষ্টি না থামায় পরে বাধ্য হয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়েছি। কারণ, যে বাসায় থাকি, সেটি ফাঁকা হয়ে গেছে। একা থাকাটা কষ্টকর, এ জন্য বৃষ্টির মধ্যেই বের হলাম।’

নাওজোর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, এই বৃষ্টির মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল যে যানজট ছিল, সেটি এখন নেই। তবে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ঘরমুখী মানুষের জন্য ঈদযাত্রা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন