দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ যানবাহন ছাড়াও শহরের ভেতরে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে বাধা দিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের ভেদভেদী এলাকায়
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটি শহরে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে হরতাল পালন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৩২ ঘণ্টার এ হরতাল শুরু হয়েছে। হরতালের কারণে রাঙামাটি থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ছয়টার পরপর পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা-কর্মীরা শহরের বিভিন্ন সড়কে নেমে পড়েন। সকাল থেকে রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়ি, রূপনগর, ভেদভেদী, বনরূপা, কাঁঠালতলী, পৌরসভা গেট ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় শত শত নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। এর মধ্যে ভেদভেদী ও কাঁঠালতলীতে সড়কে টাওয়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন নেতা-কর্মীরা।

এর আগে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের বনরূপায় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে হরতালের ঘোষণা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে ও সাত দফা দাবিতে আজ সকাল ছয়টা থেকে আগামীকাল বুধবার বেলা দুইটা পর্যন্ত রাঙামাটি শহরে হরতাল পালন করা হবে। হরতালে যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া শহরে সংগঠনটি বিক্ষোভ মিছিল করবে।

উল্লেখ্য, আগামীকাল পার্বত্য ভূমি বিরোধ কমিশনের বৈঠক আছে। বেলা ১১টায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হওয়ার কথা। এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার উল হক।

সকাল থেকেই পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা-কর্মীদের রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে দেখা গেছে
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

আজ সকাল নয়টায় বনরূপা, কাঁঠালতলী জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও রাজবাড়ি এলাকা ঘুরে কোনো অটোরিকশা বা কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। হরতাল সফল করতে সকাল থেকেই পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা-কর্মীদের রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে দেখা গেছে। দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ যানবাহন ছাড়াও শহরের ভেতরে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে বাধা দিচ্ছেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া শহরের ছোট-বড় বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রয়েছে। শুধু ওষুধ ও খাবারের দোকানগুলো খোলা দেখা গেছে।

সড়কে যানবাহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলমুখী মানুষ বিপাকে পড়েন। অনেক সরকারি–বেসরকারি অফিসের কর্মীরা হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি ব্যবসায়িক কাজে ভেদভেদী থেকে বনরূপা এসেছেন। তবে কোনো যানবাহন না পেয়ে তিন কিলোমিটার পথ তিনি হেঁটে এসেছেন।

পার্বত্য নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মো. আলমগীর কবির বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছেন। তাঁরা হরতাল সফল করতে সাধারণ যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। তবে জরুরি সেবামূলক যানবাহন ও রোগীবহকারী যানবাহনগুলো বিনা বাধায় চলাচল করছে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান সংগঠনের সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সব জাতিগোষ্ঠীর সমানসংখ্যক সদস্য নিশ্চিত করা; ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কার্যক্রম শুরুর আগে ভূমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরিপ শেষ করা; জাতিধর্ম–নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির ওপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬ ধারাগুলো বাতিল করা; পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রবর্তন করা ও সমতলের মতো জেলা প্রশাসকদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেওয়া; কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; পার্বত্য চট্টগ্রামে রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং বাংলাদেশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসন কর্তৃক বন্দোবস্ত করা অথবা কবুলিয়ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।