নারায়ণগঞ্জে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া–সংঘর্ষ, আটক ৮

পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রোববার সকাল পৌনে ৯টায় নারায়ণগঞ্জের নবাব সলিমুল্লাহ রোডের মিশনপাড়া এলাকায়
ছবি: দিনার মাহমুদ

বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা হলে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া–সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টার দিকে নগরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ ও মিশনপাড়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্ধশতাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে পুলিশ। মিছিল থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি, সমাজতান্ত্রিক দলের নেতাসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল সাতটার দিকে নগরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় হরতালের সমর্থনে গণতন্ত্র মঞ্চ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ব্যানার কেড়ে নিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ মিছিল থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সমাজতান্ত্রিক দলের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি আবদুল মোতালেবকে আটক করে।

এ বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রথম আলোকে বলেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের লাঠিপেটায় গণসংহতি আন্দোলনের জেলার নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, ছাত্র ফেডারেশনের জেলার সহসভাপতি সাইদুর রহমান, মমিন হোসেনসহ চারজন আহত হয়েছেন। মিছিল থেকে আবদুল মোতালেবকে আটক করে পুলিশ।

সকাল ৯টার দিকে নগরের মিশনপাড়া এলাকায় মহানগর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হরতালের সমর্থনে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নেন। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি শটগানের গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেছেন, সকালে প্রেসক্লাবের সামনে নেতা-কর্মীরা সমবেত হতে শুরু করলে পুলিশ গুলি ছুড়লে তাঁদের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। রোববার সকালে সাড়ে ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মিশনপাড়া এলাকায় পুলিশ নির্বিচার বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে। তাঁদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

এর আগে সকাল সাতটার দিকে নগরের কালীর বাজার এলাকার নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশ আসার আগেই দলটির নেতা-কর্মীরা সটকে পড়েন।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওরা (হরতাল সমর্থনকারীরা) পুলিশের ওপর আক্রমণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ অর্ধশতাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।


এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হরতালের সমর্থনে মিছিল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল সাতটার দিকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করলে তাঁদের আটক করে পুলিশ। আটক ইকবাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, হরতালে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামতে দিচ্ছে না পুলিশ। তাঁদের ওপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে।

নারায়ণগঞ্জে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনকে আটক করা হয়।