সেন্ট মার্টিনে আগাম কাঁচা আমের ‘টক ভর্তায়’ মুগ্ধ পর্যটক

সেন্ট মার্টিন বাজারে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা আমের ‘টক ভর্তা’
ছবি: প্রথম আলো

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের নজর কাড়ছে কাঁচা আমের ‘টক ভর্তা’। দ্বীপের গাছে আগেভাগে ধরা কাঁচা আম দিয়ে তৈরি হয় ‘টক ভর্তা’। ১০০ গ্রাম ওজনের টক ভর্তার দাম ১০০ টাকা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি।

৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার চিত্র। সেন্টমার্টিন বাজারের কয়েকটি স্থানে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে টক ভর্তা। সেন্ট মার্টিন ট্রাভেলস নামের বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ১০-১৫ জন পর্যটক একটি ভ্যানগাড়ির তিন দিকে ঘিরে রেখে টক ভর্তার অর্ডার করেন। টক ভর্তা বিক্রেতা মোহাম্মদ আমিন (৫৫) সবার সামনে কাঁচা আম কেটে তাতে কাসুন্দি, মরিচের গুঁড়া, মসলা, লবণ, চিনি, ধনেপাতা মিশিয়ে তৈরি করেন টক ভর্তা। এরপর প্লেটে করে ক্রেতাকে দেন। তাঁর ভ্যানগাড়িতে ঝুলিয়ে রাখা শতাধিক কাঁচা আম।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, এক ঘণ্টায় অন্তত ২৬ জনের কাছে আমের টক ভর্তা বিক্রি করেন মোহাম্মদ আমিন। এক প্লেট টক ভর্তা তৈরি করতে বড় আকারের একটি কাঁচা আম কাটতে হয়। ছোট হলে কাটতে হয় দুটি আম।

বিক্রেতা মোহাম্মদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের গাছে দুই মাস আগেই আম ধরেছে। আমগুলোর ওজন ১৩০-২৫০ গ্রাম।

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মোহাম্মদ আমিন বিক্রি করেন ১২ হাজার ২০০ টাকার টক ভর্তা। এতে তাঁর লাভ হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। অন্যান্য দিন ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকার টক ভর্তা বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হলে বেচাবিক্রি আরও চার-পাঁচ হাজার বেড়ে যায়। কারণ, ওই সময় পর্যটকের সমাগম ঘটে বেশি। পর্যটকের নজর কাড়ার জন্য ভ্যানগাড়িতে কাঁচা আম ঝুলিয়ে রাখা হয়। অসময়ে বাজারে কাঁচা আম দেখে পর্যটকেরা তাঁর কাছে আসেন।

মোহাম্মদ আমিনের সংসারে দুই স্ত্রী ও ১২ ছেলেমেয়ে। এখন সংসার চলছে টক ভর্তা বিক্রির টাকায়। মার্চে যখন দ্বীপে পর্যটকের আগমন বন্ধ হবে, তখন তিনি মিস্ত্রির কাজ করবেন। ঘরবাড়ি, নৌযান মেরামত ও তৈরির কাজ করেন মিস্ত্রিরা। মিস্ত্রির কাজে দৈনিক মজুরি মেলে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, কোনারপাড়ায় অন্তত ২১৫টি গাছে আগাম আম ধরেছে। আমগুলো আকারে ছোট হলেও খুবই টক। আরেক টক ভর্তার ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, প্রতিটা কাঁচা আম কিনতে হয় ৪০ টাকায়। একটা কাঁচা আম কেটেকুটে মসলা মিশিয়ে ভর্তা বানিয়ে বিক্রি করতে খরচ যায় ৬৫ টাকার মতো। বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে ভর্তার উপকরণ কাসুন্দি, মরিচের গুঁড়া, লবণ, চিনি, ধনেপাতা ও অন্যান্য মসলার দাম অনেক বেড়ে গেছে।

পূর্বপাড়ার মো. ইউনুসের দুটি গাছে অনেক আম ধরেছে। ইতিমধ্যে তিনি ২৫ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। গাছে আরও ১০-১২ হাজার টাকার আম আছে জানিয়ে ইউনুস বলেন, গাছটি মিয়ানমার জাতের আম। মৌসুমের দুই মাস আগে গাছে আম ধরে। মাঝরপাড়ার জেলে জাফর আহমদের একটি গাছেও আগাম আম হয়েছে। কয়েক দিন আগে ২০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেন তিনি।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিনের কাঁচা আমের ভর্তায় পর্যটকের আগ্রহ বেশি। দ্বীপের চারটি গ্রামের দুই শতাধিক গাছে আম ধরেছে। আমগুলো সর্বোচ্চ ২৫০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য ১২০-২০০ গ্রাম ওজন হতেই আমগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। পর্যটক ছাড়া স্থানীয় লোকজনের কেউ টক ভর্তা তেমন খান না।