বেহাল সেতুটি দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার 

সেতুটি পার হতে গিয়ে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হন। বড় দুর্ঘটনা ঘটনা আগেই সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

রত্নপুর ধামুরা খালের ওপর এই বেহাল সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নে
প্রথম আলো

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের রত্নপুর ধামুরা খালে এলজিইডির নির্মিত সেতুটি দীর্ঘদিন যাবৎ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করে আসছেন। বড় দুর্ঘটনা ঘটনা আগেই সেতুটি আশু সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের সুন্দরগাঁও ও থানেশ্বরকাঠী গ্রামের মাঝখানে রত্নপুর ধামুরা খালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) স্বল্প ব্যয় প্রকল্পের অধীনে এই সেতু নির্মাণ করে। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য এই সেতু নির্মিত হয়। ৩০ বছরে সেতুটি সংস্কার হয়নি। 

ইউনিয়নের মানুষের জন্য এই সেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেছি। তাঁরা সমস্যার সমাধান করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
মো. গোলাম মোস্তফা সরদার, রত্নপুর ইউপি চেয়ারম্যান 

এলাকাবাসী আরও জানান, রত্নপুর ইউনিয়নের সুন্দরগাঁও, থানেশ্বরকাঠী ও রত্নপুর গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সুন্দরগাঁও-থানেশ্বরকাঠী সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন সড়কে যাতায়াত করে থাকেন। এ ছাড়া এ সড়ক দিয়ে মোহনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মোহনকাঠী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের মাঝখানে রত্নপুর ধামুরা খালের সেতুটি ভেঙে পড়ে আছে। সেতুটি পার হতে গিয়ে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হন। সেতুটি সংস্কার করার জন্য বারবার উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো সত্ত্বেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, সেতুটির দুই পাশেই পাকা কার্পেটিং সড়ক রয়েছে। সেতুটির দক্ষিণ পাড়ের পাটাতন ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ ফুট সেতু পাটাতনবিহীন রয়েছে। সেতুর লোহার অ্যাঙ্গেল খুলে নেওয়ায় শুধু খুঁটির ওপর সেতুটির কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর অর্ধেকের বেশি অংশে রেলিং নেই। বিমের ওপর দিয়ে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। সেতুর দুই পাশের সিমেন্টের তৈরি পাটাতন ধসে যাওয়ায় এ রাস্তায় মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও ভ্যানসহ সব ধরনের ছোট যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এ সময় সুন্দরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সোয়েব হাওলাদার (৩২) বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত এই সেতুর দুরবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। সংস্কারের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। সেতুটির পাটাতন না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ভাঙা সেতু দিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

থানেশ্বরকাঠী গ্রামের আউয়াল হাওলাদার বলেন, ‘সেতুটিতে মানুষ উঠলে দুলতে থাকে। কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে কাত হয়ে যায়। অথচ সেতুটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলীকে সেতুটি সংস্কারের জন্য অনুরোধ করলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।’

রত্নপুর গ্রামের কৃষ্ণ কান্ত হালদার (৫০) ও শান্তিরঞ্জন হালদার (৬৫) বলেন, সেতুটি দিয়ে শিশুদের পার হতে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষার মধ্যে অনেক সময় পা ফসকে শিশুরা দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে নিচে পড়ে যায়। এ সেতু পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় প্রায় ৩০-৩৫ জন শিশু আহত হয়েছে।

রত্নপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা সরদার বলেন, ‘সেতুটির এক পাশে সুন্দরগাঁও গ্রাম, আরেক পাশে থানেশ্বরকাঠী গ্রাম। ইউনিয়নের মানুষের জন্য এই সেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেছি। তাঁরা সমস্যার সমাধান করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, আগে কার সঙ্গে সেতুটির ব্যাপারে এলাকাবাসী যোগাযোগ করেছেন, তার বিষয়ে তিনি জানেন না। তিনি এই উপজেলায় আসার পর এ ব্যাপারে কোনো আবেদন পাননি। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর অবস্থা যে খুবই নাজুক ও বেহাল, সে সম্পর্কে তিনি জেনেছেন। সেতুটি সংস্কারের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।