অনুপস্থিত থেকেও বেতন–ভাতা নেওয়ার অভিযোগে বান্দরবানের আলীকদমের তিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই। পরে আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
ব্যবস্থা নিতে বলা বিদ্যালয়গুলো হলো রেংপুং হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাইতুমণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মেনকিউ মেনকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ তিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। তবে তাঁদের মধ্যে দুজন প্রশিক্ষণে থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া এক অফিস আদেশে জেলা পরিষদ থেকে বলা হয়, তিন বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষক কর্মস্থলে যাননি। শিক্ষার্থীদেরও পাঠদান করেননি। তবে নিয়মিত বেতন–ভাতা নিয়েছেন। বেতন নিয়ে তামাক চাষসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ করেছেন। নিজেরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বর্গা শিক্ষক (নিজের পরিবর্তে অন্যজনকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া) নিয়োগ দিয়েছেন।
অফিস আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের সংবাদে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জেলা পরিষদ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ১৩ জনের কেউ সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তাই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল এই তিন বিদ্যালয় সরকারি করা হয়েছিল। সরকারীকরণের পর এই তিন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতি, বর্গা শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন–ভাতা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর এ ঘটনা তদন্তের জন্য চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তিন সদস্যর কমিটি করা হয়। এতে জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যাকে প্রধান করা হয়। পরে কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাইতুমণিপাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংসাথুই মারমা বলেন, তিনি এক বছর প্রশিক্ষণে ছিলেন। এ সময় বিদ্যালয় কীভাবে চলেছে জানেন না। বিদ্যালয়টি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় সব শিক্ষকের পক্ষে, বিশেষ করে নারী শিক্ষকের প্রতিদিন উপস্থিতি থাকা সম্ভব হয় না। তবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকে না।
মেনকিউ মেনকপাড়া বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজিব ম্রো বলেন, দুর্গমতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে আগে বিদ্যালয়ে থাকার পরিবেশ ছিল না। বর্তমানে তাঁরা বিদ্যালয়ের পাড়ায় থাকেন। নারী শিক্ষকদের সমস্যা এখনো কাটেনি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আলীকদম উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়গুলো অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। এ কারণে পরিদর্শনে যাওয়া কঠিন। তবে জেলা পরিষদের তদন্তের পরে শিক্ষা কার্যক্রম অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।