নৌযান চলাচল বন্ধ করে সেতু নির্মাণ, ভোগান্তি

নদীটি দিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এবং শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চলে উৎপাদিত শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন স্থানে আনা-নেওয়া করা হয়।

রজতরেখা নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ করে চলছে সেতু নির্মাণছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রজতরেখা নদী লোহার খুঁটি দিয়ে আটকিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এতে ওই নদীতে ১৫ দিন ধরে নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নৌপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। নদীপথ ব্যবহার করে হিমাগারে আলু রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কয়েক শ কৃষক। সেতুটির অবস্থান সদর উপজেলার চরকেওয়ার ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সংযোগস্থল চরডুমুরিয়া এলাকায়।

মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চরডুমুরিয়া বাজারসংলগ্ন রজতরেখা নদীতে ১০৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণ শুরু হয়। চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতুটির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সাগর বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নদীতে খুঁটি বসিয়ে কাজের বিষয়ে পানি উন্নয়নবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। খুঁটি না বসালে গার্ডারের কাজ করা যাবে না। এ মুহূর্তে খুঁটি সরানোও যাবে না।
নাজমুস হোসেন, মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, চরডুমুরিয়া বাজারসংলগ্ন বেইলি সেতুর পাশেই দুই লেনবিশিষ্ট নতুন কংক্রিটের সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। সেতুর দুই পিলারের মধ্যখানে কয়েক শ লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে। এতে করে এ নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটি সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৌপথটি সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কৃষক, ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি গুরুত্ব রাখে।

এ নৌপথ ব্যবহার করে সদর উপজেলার চরকেওয়ার, মোল্লাকান্দি, আধারা, শিলই ইউনিয়ন এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, যশলং, কামারখাড়া ইউনিয়নসহ শরিয়তপুর জেলার চরাঞ্চলে উৎপাদিত হাজার হাজার টন আলুসহ শাকসবজি পরিবহন করে হিমাগার, স্থানীয় বাজার, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আনা-নেওয়া করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর সেতুটি নির্মাণ করতে গিয়ে নদীর দুই পাশে অন্তত ৫০ ফুট করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। তখনই নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল। নদীর যতটুকু অংশ বাকি ছিল, সেটাও এবার বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে সম্পূর্ণভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। যে কারণে এ নৌপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বিপাকে আছেন। উৎপাদিত আলু হিমাগারে রাখা নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকেরা।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর ও টঙ্গিবাড়ী এলাকায় অধিকাংশ হিমাগারের অবস্থান হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা আলু সংরক্ষণ করতেও এ নদীপথটি ব্যবহার করে থাকেন। নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ করে সেতু নির্মাণের কাজ করায় কৃষকেরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তার রয়েছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেতুটি নির্মাণকাজের ব্যবস্থাপক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, সেতুর মধ্য ভাগে পাঁচটি গার্ডার বসানো হবে। নিয়মিত কাজ করলেও কাজ শেষ করতে অন্তত চার মাসের মতো সময় লাগবে।

এদিকে ১৫-২০ দিন পরেই নদীর দুই তীরের আলু উত্তোলন শুরু হবে। জেলা আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের পরে নৌপথ বন্ধ করুক। নদী এখন আটকালে আলুচাষি কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগারের মালিকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে।

সদরের মাকাহাটি এলাকার বাঁশ ব্যবসায়ী আয়নাল হক। তিনি এ নৌপথ ব্যবহার করে নিয়মিত বাঁশ আনা–নেওয়া করেন। নদী বন্ধ থাকায় বাঁশ নিয়ে যেতে পারছিলেন না আয়নাল হক। এ নৌপথ ছাড়া বাঁশ আনার বিকল্প কোনো পথ নেই তাঁর। সোমবার চরডুমুরিয়া বাজারের পাশে ট্রলার থেকে বাঁশ নিয়ে সেগুলো পাশেই স্তূপ করছিলেন। আয়নাল হক বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে ২৪ হাজার টাকা ট্রলার ভাড়া করে বাঁশগুলো এনেছি। চরডুমুরিয়া থেকে মাকাহাটি পাঁচ কিলোমিটারের পথ। এ সামান্য পথ যেতে অতিরিক্ত আরও ২০ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। ভোগান্তির কথা বাদই দিলাম।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্সের কাছ থেকে সাব ঠিকাদারির দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন আমিনুল ইসলাম। নৌপথ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নদীতে খুঁটি দিয়ে আটকিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। গার্ডারের কাজ করতে হলে খুঁটি বসিয়েই করতে হবে।

একই কথা জানালেন মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুস হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নদীতে খুঁটি বসিয়ে কাজের বিষয়ে পানি উন্নয়নবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। খুঁটি না বসালে গার্ডারের কাজ করা যাবে না। এ মুহূর্তে খুঁটি সরানোও যাবে না। নৌপথ ব্যবহারকারীদের সাময়িক কিছু ভোগান্তি হবে। কাজ শেষ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।