বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মাদকসেবীদের হাতে খুন হয়েছেন ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক হারুন অর রশীদ ফকির (৪২)। নেশার টাকা জোগাতে ভ্যান ছিনতাই করার জন্য যাত্রী সেজে ভ্যানে ওঠেন তাঁরা। এরপর নির্জন স্থানে যাওয়ার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে চালককে প্রথমে কুপিয়ে আহত করেন। পরে পায়ের রগ কেটে চালকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর ভ্যান বিকল হয়ে গেলে ব্যাটারি খুলে নিয়ে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
ভ্যানচালক হারুন অর রশীদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর আসামি মুক্তার হোসেন (৪০) শনিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জিনিয়া জাহানের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন।
মুক্তার উপজেলার আশুঞ্জা গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে। এ ছাড়া মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি উপজেলার ছোট জয়পুরপাড়া গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে শাকিলকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত সোমবার সকালে উপজেলার করমজি-গুনাহার সড়কের পাশে একটি ধানখেত থেকে ভ্যানচালক হারুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের দুই পায়ের রগ কাটা এবং মাথা-পিঠসহ শরীরের একাধিক জায়গায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় দুপচাঁচিয়া সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভ্যানচালক হারুন উপজেলার ইসলামপুর বড়বাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি ঘাট মাগুড়া গ্রামে বসবাস করতেন।
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন হারুন। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া সিও অফিস মোড় থেকে আক্কেলপুর সড়কের করমজি ও বেড়া গ্রাম পর্যন্ত ভ্যান চালাতেন। গত রোববার বিকেলে ভ্যান নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। রাতে আর বাড়িতে ফেরেননি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন সকালে করমজি-গুনাহার সড়কের পাশে ধানখেতে তাঁর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় পাশের জঙ্গলে পরিত্যক্ত অবস্থায় তাঁর ভ্যান পাওয়া যায়। তবে ভ্যানের চারটি ব্যাটারি খুলে নেওয়া হয়েছিল।
আদালতে আসামি মুক্তারের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় হারুন জানিয়েছিলেন, মাত্র একটা ট্রিপ দিয়েই বাড়িতে ফিরবেন। এরপর যাত্রীর জন্য সিও অফিস বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন। গ্রেপ্তার ২ জনসহ মোট ৩ জন আক্কেলপুর যাওয়ার কথা বলে ২০০ টাকা ভারা ঠিক করে হারুনের ভ্যানে ওঠেন। পথে ডিমশহর মোড় থেকে আরও একজন যাত্রী ভ্যানে ওঠেন। দুপচাঁচিয়া জে কে কলেজ ও ডিমশহর হয়ে কয়েক ঘণ্টা বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাঘুরির পর হারুন বাড়ি যেতে চাইলে ভ্যানে ওঠা মুক্তার ও তাঁর সহযোগীরা খেপে যান। একপর্যায়ে কুশ্বহর ইসলামপুর থেকে করমজি অভিমুখী রাস্তার নির্জন স্থানে পৌঁছালে মুক্তার ও তাঁর সহযোগীরা তরল মাদক খেয়ে মাতলামি শুরু করেন। এরপর ভ্যান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালক হারুনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপানোর পর পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। একপর্যায়ে ভ্যান বিকল হয়ে পড়লে প্রায় তিন কিলোমিটার ঠেলে ভাটাহার গ্রামের ইউক্যালিপটাস বাগানের মধ্যে ভ্যান রেখে ৪টি ব্যাটারি খুলে নেন এবং তা ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
ওসি আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, মাদকের টাকার জন্য ভ্যান ছিনতাই করতেই চালক হারুনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মুক্তার হোসেন স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন।