বগুড়ায় ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সেই মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু

লাশ
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের পর ধরিয়ে দেওয়া আগুনে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী (১৭) প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তার শরীরে চামড়া প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারের পর আর জ্ঞান ফেরেনি। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মেয়েটির বাবা আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বগুড়ার শিবগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হবে। মেয়েটি প্রায় দেড় মাস যন্ত্রণায় ছটফট করেছে।

থানা-পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই কিশোরী স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ত। গত ৭ সেপ্টেম্বর কিশোরীর মা-বাবা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় মেয়েটি বাড়িতে একা ছিল। পরের দিন দুপুরে বখাটে তরুণ সাইফুল ইসলাম (২০) বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। মৃত ভেবে কিশোরীর গায়ে পাটের বস্তা ও কাপড় পেঁচিয়ে সয়াবিনের তেল ঢেলে আগুন দেন ওই তরুণ। এতে কিশোরীর দুই হাত, ডান গাল, গলার নিচের অংশ, বাঁ পাসহ শরীরের বেশির ভাগ অংশ দগ্ধ হয়। আগুনের তাপে কিশোরীর জ্ঞান ফিরলে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। প্রথমে তাকে বগুড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকায় আনা হয়।

ওই কিশোরীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত সাইফুলকে আটক করে থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে হেফাজতে নেয়। কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জ থানায় তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। অন্য দুই আসামি রঞ্জু (৪০) ও নাঈম (২৩) পলাতক।

আরও পড়ুন

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রউফ বলেন, মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তিনি মাছের খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকে ফেরার পথে বৃষ্টির কারণে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়িতে আর কেউ না থাকায় কিশোরীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে নিজেকে বাঁচাতে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সাইফুল।

কিশোরীর স্বজনদের অভিযোগ, সাইফুল ইসলাম অনেক আগে থেকে ওই কিশোরীকে বিরক্ত করতেন। একবার এমন এক ঘটনায় সালিস হয়। সালিসে সাইফুল নিজের দোষ স্বীকার করে মাফ চান। ওই ঘটনার পর থেকে সাইফুল ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে নারীঘটিত কেলেঙ্কারি, চুরি থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় তিনি যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পান।