এক ভবন উদ্বোধনে এত খরচ কীভাবে, ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের এই ভবন উদ্বোধনেই খরচ হয়েছে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকাফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভবন উদ্বোধনেই সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা খরচের ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত রোববার ডাকযোগে পাঠানো এক চিঠিতে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি তাঁরা আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো চিঠি পাননি।

চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক হাসিনা খান। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো পত্রিকার এ প্রতিবেদন তাঁরা দেখেছেন। এ প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে লিখিত বক্তব্য চেয়েছেন। এতে ভবন উদ্বোধনের খরচ কোন খাতে, কীভাবে করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

চিঠি পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত তিনি এমন কোনো চিঠি পাননি। যেহেতু আর্থিক বিষয় তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক দপ্তরে এ–সংক্রান্ত চিঠি থাকতে পারে। পরে ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত এ–সংক্রান্ত কোনো চিঠি তিনি পাননি।

গত শনিবার  প্রথম আলোর অনলাইনে ‘এক ভবন উদ্বোধনেই সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা খরচ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ খরচ দেখানো হয়। এমন বিপুল ব্যয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানা সমালোচনা। শিক্ষক সমিতির একাধিক নেতাও এ নিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন।

ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের এই একাডেমিক ভবন গত ৪ জুন উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবন গত এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেন ঠিকাদার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি দপ্তরের নথিপত্রে দেখা যায়, ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে যে কমিটি করা হয়, সে কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার। দুই দফায় তিনি অনুষ্ঠানের জন্য টাকা নেন। প্রথমবার নেন ৩০ মে। ওই দিন পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষামন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গঠিত কমিটির সদস্যসচিবকে (প্রক্টর) ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়ার জন্য উপাচার্য শিরীণ আখতার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন টাকা তোলেন প্রক্টর।

অনুষ্ঠানের পর ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপে আবারও টাকা নেন প্রক্টর। ওই দিন হিসাব নিয়ামক দপ্তরকে দেওয়া এক চিঠিতে প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার উল্লেখ করেন, ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে ৩৩ লাখ টাকা তিনি নিয়েছিলেন, তা দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়নি। জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক অতিরিক্ত খরচের কারণে আরও ১১ লাখ টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ ভবন উদ্বোধনের খরচ হয়েছে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।