বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
নারী জাগরণ ও নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে ‘মুরতাদ কাফির’ আখ্যা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি এ আখ্যা দেন। তাঁর মন্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
ওই শিক্ষকের নাম খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। আজ মঙ্গলবার বেগম রোকেয়া দিবসে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘আজ মুরতাদ কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।’ ওই শিক্ষক সাজিদ হাসান নামের ফেসবুক আইডির যে পোস্টটি শেয়ার করেছেন, তা মূলত বেগম রোকেয়ার রচনাবলি থেকে ইসলাম-সম্পর্কিত বিভিন্ন খণ্ড খণ্ড অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এই স্ট্যাটাস ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
মাহমুদুল হাসানের পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে রাকসু নির্বাচনের বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদের প্রার্থী মামুনুজ্জামান স্নিগ্ধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই ভদ্রলোক যে বিভাগে শিক্ষকতা করেন, ওই একই বিভাগে নারী শিক্ষকও আছেন, কেমব্রিজপড়ুয়া ম্যামও আছেন। অনেক সনাতন মেয়েশিক্ষার্থী আছেন, হিজাব ব্যবহার করেন না—এমন শিক্ষার্থী আছেন। কিংবা ওনার মত-পথের বিরুদ্ধের মানুষ আছেন। এসব মানুষ কি আদৌও এই শিক্ষক সব নারীশিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সাথে কি নিরাপদ?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ও আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাসুদ রানা লিখেছেন, ‘এই ধরনের মানুষ কীভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে?’
শিক্ষকের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক পরমা পারমিতা। তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়া ছিলেন উপমহাদেশের নারীশিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি কখনোই ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না; বরং অন্ধ কুসংস্কার, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন—যা ইসলামসহ সব ধর্মই সমর্থন করে।’
এ বিষয়ে জানতে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেও কথা বলেননি। পরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যে পোস্টের ক্যাপশনে আমি এটি লিখেছি, সেই পোস্টেই বিস্তারিত সব ব্যাখ্যা আছে। আমার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে চাইলে কোনো ভালো আলেমের কাছে জানতে পারেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুকে অনেকেই অনেক কিছু লেখেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এ ধরনের বক্তব্য বর্তমান প্রশাসন সমর্থন করে না। কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানালে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’