প্রধান ৮ সড়কে খানাখন্দ

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কে খানাখন্দে ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।

বেহাল হয়ে পড়েছে নওগাঁ পৌরসভার আলুপট্টি-লস্করপুর সড়ক। গত বৃহস্পতিবার শহরের কালীতলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সড়কের দুই পাশে নেই ফুটপাত। যানবাহনের গা ঘেঁষে চলাচল করছেন পথচারীরা। বৃষ্টির কারণে সড়কে জমে থাকা কাদাপানি যানবাহন চলার সময় ছিটকে এসে পড়ছে পথচারীদের শরীরে। সড়কের অনেক অংশে পিচ-খোয়া উঠে গেছে। নওগাঁ শহরের বাজার এলাকায় ব্রিজের মোড়-কালীতলা সড়কে গিয়ে দুর্ভোগের এই চিত্র দেখা যায়। 

শহরের প্রধান বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়া সড়কটির দুই পাশে অর্ধশতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কটি ব্যস্ত থাকে। ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের ব্রিজের মোড় থেকে কালীতলা মোড় পর্যন্ত সড়কটির অন্তত দেড় কিলোমিটার অংশ কয়েক বছর ধরে বেহাল। রাস্তাটির কার্পেটিং উঠে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

শুধু ব্রিজের মোড়-কালীতলা সড়কটি নয়, নওগাঁ পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ অন্তত আটটি প্রধান সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় খানাখন্দে ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

ব্রিজের মোড় থেকে কালীতলা সড়ক, শহরের সুপারিপট্টি থেকে চুরিপট্টি হয়ে গোস্তহাটির মোড় সড়ক, পার-নওগাঁ আলুপট্টি মোড় থেকে লস্করপুর সড়ক, ডিগ্রি কলেজ থেকে থানা মোড় সড়ক, সিও অফিস মোড় থেকে দুর্গাপুর চৌরাস্তা, জনকল্যাণ-ইঁদুর বটতলী সড়ক, তাজের মোড় থেকে বউ বাজার সড়ক ও তাজের মোড় থেকে বটতলী সড়ক—এই আটটি সড়ক বেহাল হয়ে আছে। এ ছাড়া পাড়ামহল্লার অসংখ্য রাস্তা সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

ব্রিজের মোড়-কালীতলা সড়কের পাশে আল আমিন ক্লথ স্টোর। দোকানের মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দোকানের সামনে সড়কে বড় গর্ত। এই গর্তে পানি জমে কাদাপানিতে একাকার। প্রায় সময় রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় দোকানে কাদাপানি ছিটকে এসে পড়ে। রাস্তায় কাদাপানি জমে থাকায় দোকানে ক্রেতা কম আসছে।’

নওগাঁ পেপার হাউস নামের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী সুভাষ চন্দ্র জানান, রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে এমন অবস্থা হয়েছে যে এটা পাকা রাস্তা না কাঁচা রাস্তা, বোঝার উপায় নেই। বর্ষার সময় কাদাপানিতে একাকার হয়ে থাকে। আর শুষ্ক মৌসুমে দোকানের মালামালে ধুলার আস্তরণ পড়ে যায়।

শহরের আলুপট্টি এলাকা নওগাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক এলাকা। এই এলাকায় ৪০ থেকে ৫০টি চালের মোকাম অবস্থিত। এসব মোকাম থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাল যায়। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে আলুপট্টি হয়ে সুলতানপুর মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এসব মোকাম। কিন্তু সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির কোথাও বড় বড় গর্ত। কোথাও ছোট গর্ত। আবার কোথাও সড়কের পিচ-খোয়া উঠে গিয়ে পাকা সড়ক কাঁচা সড়কে রূপ নিয়েছে। সড়কের বড় বড় গর্তের অংশে জমি রয়েছে বৃষ্টির পানি। কাদাপানি মাড়িয়ে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে।

আলুপট্টি এলাকার বাসিন্দা সুদেব কুমার বলেন, আলুপট্টি থেকে লস্করপুর পর্যন্ত সড়কটি সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালের দিকে সংস্কার করা হয়। এরপর থেকে এই রাস্তা আর সংস্কার হয়নি। এই রাস্তা দিয়ে চালবাহী ভারী যান চলাচল করায় সড়কের ইট-খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। গত পৌর নির্বাচনের আগে রাস্তার গর্তগুলোতে ইট ফেলে গাড়ির চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। কিছু দিন পর রাস্তাটি আবারও খানাখন্দে ভরে যায়।

নওগাঁ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ১৫টি প্রধান সড়কসহ পাড়া মহল্লার ভেতর দিয়ে আরও শতাধিক  সড়ক রয়েছে। ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রথম শেণির এই পৌরসভায় নকশায় অন্তর্ভুক্ত মোট ২৯৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে ১২০ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার, আধাপাকা ৩০ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক ১৪২ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার।

পৌরসভার প্রধান প্রধান সড়কে দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র নজমুল হক বলেন, প্রধান প্রধান সড়কের প্রায় সব কটিই সংস্কারের জন্য প্রকল্প হয়ে আছে। এর মধ্যে বাটার মোড়-গোস্তহাটির মোড়, ব্রিজের থেকে ডাবপট্টি-টিনপট্টি হয়ে কালীতলা সড়ক, তুলাপট্টি হয়ে কাপড়পট্টি-চুরিপট্টি সড়ক ও কলেজ মোড় থেকে থানা মোড় সড়কের ঠিকাদার নির্বাচন হয়ে আছে। শিগগিরই এসব রাস্তা সংস্কারে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। অন্য রাস্তাগুলোই সংস্কারের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলোর জন্য ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়া দুই-তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।