রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলের ইটিপি ঢেকে গেছে ঝোপঝাড়ে

প্রায় আড়াই বছর আখমাড়াই কার্যক্রম বন্ধ। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ইটিপি নির্মাণ করার কাজ।

আখমাড়াই বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ইটিপি নির্মাণের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলে প্রায় আড়াই বছর ধরে আখমাড়াই কার্যক্রম বন্ধ। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের কাজ। ৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। স্থানটি এখন ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।

জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্যামপুর চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। এর অবস্থান বদরগঞ্জ উপজেলায়। পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লোকসান গুনতে শুরু করে কারখানাটি। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়ায় ২২৬ কোটি টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে ছয়টি কারখানার সঙ্গে শ্যামপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে ব্যাংকে ঋণের সুদ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্র্যাচুয়িটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়ার পরিমাণ সাড়ে ২৫ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে চিনিকলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১৮ সালে ১ জুলাই ইটিপি নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে আখমাড়াই বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে এর নির্মাণ কাজও বন্ধ হয়ে যায়।

চিনিকল কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারি অর্থায়নে ইটিপি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। নির্মাণের মেয়াদকাল ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, ৩০ শতাংশের বেশি কাজ হয়নি।

শ্যামপুর চিনিকলের আয়তন প্রায় ১১১ দশমিক ৪৫ একর। একসময় এই চিনিকলের আওতায় ৩০ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ চাষ হতো। বর্তমানে সীমিত পরিসরে ১৬০ একর জমিতে আখ চাষ হয়। এই আখ সরবরাহ করা হয় জয়পুরহাট চিনিকলে। আর ২০২০ সাল পর্যন্ত মিলে স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন ৭৪৪ জন। বর্তমানে আছেন ৭১ জন। চিনিকলের আখমাড়াইয়ের সক্ষমতা দৈনিক ১ হাজার ১৬ মেট্রিক টন। বাৎসরিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, শ্যামপুর চিনিকলের প্রধান ফটক বন্ধ। নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ। গাছগাছালির সুবজ ছায়া। শ্রমিক-কর্মচারীদের নেই কোনো কোলাহল। শুধু প্রশাসনিক ভবনের বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায়। কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, মাঠের ভেতর আখ পরিবহনের ট্রাক্টর-ট্রলি ঝোপঝাড় ও লতাপাতায় ঢেকে আছে। কারখানার ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে রাখা হয়েছে। মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম অনেক যন্ত্রপাতি। কারখানার পেছনে ইটিপি নির্মাণের জায়গা ঝোপজঙ্গলে ঢেকে গেছে। পিলারের রডগুলো বেরিয়ে আছে।

শ্যামপুর চিনিকল এমপ্লইজ ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান আগে ৫০ একর জমিতে আখ চাষ করতেন। এখন মাত্র তিন-চার একর জমিতে তিনি আখ চাষ করেন। এই আখ জয়পুরহাট চিলিকলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘নতুন করে চিনিকলের আখমাড়াই শুরু করার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কী হবে জানি না। আমরা চাই, চিনিকল চালু হোক। আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসুক কারখানায়।’

শ্যামপুর এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন (৬৩) ও মনোয়ার হোসেনের (৬৪) সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানালেন, মিল বন্ধ হওয়ায় এখন আর আখ চাষ হয় না। সেখানে এখন আলু-ধানসহ সবজি আবাদ করছেন। আফজাল বলেন, দেশে চিনির দাম দিন দিন বাড়ছে। এখন এই চিনিকল চালু থাকলে সবার উপকার হতো।

চিনিকলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে চিনির বাজার ঊর্ধ্বগতির কারণে চিনিকল চালু হলে দেশের জন্য ভালো হতো। চিনিকল চালু হলে এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

চিনিকল নতুন করে চালু এবং ইটিপি নির্মাণ প্রসঙ্গে মাসুদ সাদিক বলেন, শোনা যায় চালু হবে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা নেই। কারখানা বন্ধ হওয়ার সময় থেকে ইটিপি নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।