আধুনিক হচ্ছে দুগ্ধ খামার

উপজেলায় শতাধিক আধুনিক খামার গড়ে উঠেছে। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে দুধ, মাংস ও দুগ্ধপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। 

খামারে যন্ত্রের (মিল্কিং মেশিন) মাধ্যমে গাভির দুধ দোহন করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ মাদরাজ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

দৌলতগঞ্জ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি লিমিটেডের খামারেই উন্নত জাতের ঘাসের চাষ করা হয়। বর্তমানে খামারে ১৬০টি গরু আছে। এর মধ্যে ৫৬টি গাভি দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন ৪৪০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। দিনে দুই বেলা যন্ত্র দিয়ে ও সনাতন পদ্ধতিতে দুধ সংগ্রহ করা হয়। দোহনকারীর পায়ে থাকে ভাইরাসমুক্ত জুতা ও গায়ে অ্যাপ্রোন। এই দুধ দিয়ে খামারমালিক মিষ্টি ও ঘি তৈরি করে বিক্রি করেন।

খামারটিতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। নালা দিয়ে দূরে বর্জ্য ট্যাংকে পড়ে। সেখান থেকে প্ল্যান্টে বায়োগ্যাস ও জৈবসার তৈরি হয়। দৌলতগঞ্জ খামারের অবস্থান ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার এ্যাওয়াজপুর ইউনিয়নে মায়া নদীর তীরে। এ রকমই উপজেলায় শতাধিক আধুনিক খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে যন্ত্রপাতি ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আধুনিক মানের। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে দুধ, মাংস ও দুগ্ধপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ হচ্ছে বেশি।   

দৌলতগঞ্জ খামারের ব্যবস্থাপক নাজিমউদ্দিন বলেন, যান্ত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে খামার ব্যবস্থাপনা সহজ ও সুন্দর হয়েছে। এতে আয়ও বেড়েছে। খামারে উৎপাদিত দুধ চলে যায় একই মালিকের দুগ্ধপণ্য উৎপাদন কারখানায়। তাঁদের মিষ্টির দোকান (শো-রুম) ও কারখানা চরফ্যাশন উপজেলার সদর রোডে। এখানে তাঁদের খামারের দুধ ছাড়াও বাইরের খামারের দুধও কেনা হয়। দিনে দুইবার দুধ দোহন হয়। বিকেলের দুধ রাখা হয় কারখানার সিলিং প্ল্যান্টে। সেখানে ৫০০ লিটার পর্যন্ত দুধ ৩ দিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়। বিকেলের দুধ প্রতিদিন ভোরে ক্রিম সেপারেশন মেশিনে ক্রিম বের করে ঘি তৈরি করা হয়।

খামারের মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পিকেএসেফের অর্থায়নে খামার ও কারখানাকে আধুনিক ও পরিবেশসম্মত বানাতে বিনা মূল্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সহায়ক উপকরণ, প্রশিক্ষণ-পরামর্শ দিচ্ছে পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ)। এখন আয় ভালোই হচ্ছে।’ 

চরফ্যাশন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৮৬টি গরু ও ৮২টি মহিষের খামার আছে। গরুর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ২২৩টি। মহিষের সংখ্যা ৫২ হাজার ১৯০টি। ছাগলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৪৮০টি এবং ভেড়ার সংখ্যা ৮ হাজার ৬৯৮টি। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। আর প্রতিদিন মাংস উৎপাদন ৮৮ মেট্রিক টন।

খামার আধুনিকীকরণে পিকেএসএফের অর্থায়নে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা এফডিএ। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, চরফ্যাশনে দুধের দাম কম ছিল। খামারির উৎপাদন খরচ উঠছিল না। করোনার সময়ে খামারিদের অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়। দুধ বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিল। তখন দুধের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে নতুন ও পুরোনো উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পিকেএসএফের অর্থায়নে পরিবেশসম্মত, আধুনিক খামার ও দুগ্ধপণ্য উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কম খরচে দুধ ও বিশুদ্ধ দুগ্ধপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। 

উপজেলার দক্ষিণমাদ্রাজ গ্রামে নীলা ডেইরি ফার্মের মালিক মো. ইলিয়াস। তাঁর খামারে তিনটি টিনশেডে ১১৪টি গরু রয়েছে। তাঁর ১২ একর জমিতে ঘাস রয়েছে। ইলিয়াস বলেন, খামারে যান্ত্রিক ব্যবহার, নিজেদের গোখাদ্য উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ প্রস্তুতি আধুনিকমানের হওয়ায় খরচ কমেছে। লাভও বেশি হচ্ছে। 

এসব খামারের দুধের ওপর নির্ভর করে চরফ্যাশনে শতাধিক মিষ্টির দোকান গড়ে উঠেছে। উপজেলা শহরের ফ্যাশন স্কয়ারে সিরাজ মিয়ার ‘রস মিঠাই’ নামের মিষ্টির দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সেখানে ৮০ কেজি মিষ্টি ছাড়াও ক্রিম সেপারেশন মেশিনের মাধ্যমে মাখন ও মাখন জ্বালিয়ে ২০ কেজি ঘি তৈরি করা হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকার ওপরে লাভ হচ্ছে বলে জানান সিরাজ।