ত্বকী হত্যার ১২ বছর পূর্তিতে তার কবরে ফুল দিল বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরীর শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। আজ বৃহস্পতিবার সেই মর্মান্তিক ঘটনার ১২ বছর পূর্তি। নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজও সেই হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়নি। ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির নেতৃত্বে এক যুগ ধরে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। তাঁরা ত্বকী হত্যার বিচার সম্পন্ন না করে ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মোল্লা বাড়ি এলাকায় ত্বকীর কবরে ফুল দিয়ে তাকে স্মরণ করেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। রাজপথে থেকে বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ভবানী শংকর রায় বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে আমরা ১২ বছর যাবৎ আন্দোলন চালিয়ে আসছি। দেশে একটি হত্যার বিচারের দাবিতে টানা ১২ বছর ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নজির নেই। তারপরও রাষ্ট্রযন্ত্র ত্বকী হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেয়নি। খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেপ্তার করেনি। সরকার ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত ত্বকী হত্যার বিচার করার আহ্বান জানাই আমরা।’
ত্বকী হত্যার পর থেকে ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
আজ ত্বকীর কবরে ফুল দেন তার বাবা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, খেলাঘর আসর জেলা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হিমাংশু সাহা, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর জেলা সভাপতি জাহিদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাসুম সেকান্দার, বাসদ নেতা ও সাবেক ১৫ নম্বর ওয়ার্ড সিটি কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, সামাজিক সংগঠন সমমনার পক্ষ থেকে দুলাল সাহা, গোবিন্দ সাহা, সেলিম ভূঁইয়া, প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, মহানগর কমিটির নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন জেলা কমিটির সভাপতি ফারহানা মানিক, ক্রান্তি খেলাঘর আসরের পক্ষ থেকে প্রণয় ও আদনান। এ সময় সেখানে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
আজও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়নি। এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন ঘাতক ত্বকীকে হত্যা করেছে। ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়।