গজারিয়ায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, সোনারগাঁয়ে লাঙ্গলের প্রচারে বাধা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে এভাবেই পড়ে আছে ভাঙা চেয়ার ও আসবাব। শনিবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ-৩ (গজারিয়া-সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্প ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার বিকেলে গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থকের বাড়িতে গোলাগুলি করার অভিযোগ উঠেছে।

মোহাম্মদ ফয়সাল আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের ছেলে ও মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণার কাজ করছিলেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা ভবেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন কার্যালয়ের ভেতর সাউন্ডবক্সে নৌকার প্রচার চলছিল। ফয়সালের সমর্থকেরা বক্স বাজাতে নিষেধ করলে নৌকার সমর্থকেরা তাঁদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ার, আসবাব ভাঙচুর করা হয়।

নৌকার সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান সাহিদ মো. লিটন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল নিজে দলীয় কার্যালয়ে লোকজনসহ প্রবেশ করেছেন। নৌকার প্রার্থীকে গালিগালাজ করে কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন। তিনি একজন প্রার্থীর এমন আচরণের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন দেখে গেছে। তারা যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাঁরা কর্মসূচি পালন করবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ। একজন প্রার্থী হয়ে কোনো অবস্থাতেই দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করতে পারি না। আমার জনসমর্থনে ভয় পাচ্ছে নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকেরা। এ জন্য নিজেরাই কার্যালয় ভাঙচুর করে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করব।’

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজিব খান বলেন, কার্যালয়ের বেশ কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। দুই পক্ষ একে-অপরকে দুষছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বতন্ত্র সমর্থকের বাড়িতে গুলি

এদিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে গতকাল শুক্রবার রাতে হেবা মোল্লা নামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থকের বাড়িতে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। হেবা মোল্লার স্ত্রী বিউটি বেগম বলেন, তাঁর স্বামী কাঁচি প্রতীকের সমর্থন করায় শুক্রবার রাতে নৌকার শতাধিক লোক বাড়িতে এসে তাঁদের শাসাতে থাকেন। একপর্যায়ে জানালা লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়েন তারা।

মোল্লাকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর দাবি, হেবা মোল্লা শুক্রবার বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে গিয়েছিলেন। এ জন্য নৌকার সমর্থকেরা তাঁর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুক্রবার রাতে তাঁরা নৌকার পক্ষে মিছিল নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। হেবা মোল্লাদের বাড়িতে যাননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গজারিয়া-সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান বলেন, গজারিয়া ও সদরের ঘটনা শোনামাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

লাঙ্গলের প্রচার মাইক ভাঙচুর

এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকত হোসেন ওরফে খোকার প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় প্রচারে ব্যবহৃত একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুরের পর চালককে মারধরের অভিযোগ করেন প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়কারী মাহমুদুল আনোয়ার।

রিকশাচালক শাহ আলম রিকশায় মাইক লাগিয়ে চুক্তিভিত্তিক লাঙ্গল প্রতীকের প্রচারকাজ করছিলেন। তিনি বলেন, গতকাল সকালে জামপুর ইউনিয়নের বেলাবো এলাকায় লাঙ্গলের ভোট চেয়ে মাইকে প্রচার চলছিল। কয়েকজন তরুণ এসে মাইক বন্ধ করতে বলেন। তিনি বন্ধ করতে রাজি না হলে তাঁরা মারধর করে রিকশা ও মাইক ভাঙচুর করেন।

নৌকার প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে রিকশাচালকের তর্কবিতর্ক হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নন। জাপার প্রার্থী ফায়দা নিতে বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।

সোনারগাঁ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। উচ্চ শব্দ নিয়ে তর্কের জেরে এই ঘটনা। পরে তারা নিজেদের মধ্যে মীমাংসাও করেছে। মারধর বা ভাঙচুরের অভিযোগ পাননি।